ভর্তি জালিয়াতি: বহিষ্কৃত ঢাবি ছাত্র এখন কোচিং পরিচালক
ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র জালিয়াতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। সেই তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের পরিচালক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
বহিষ্কৃত হওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. ফরহাদ উদ্দিন ওরফে আবির। তাকে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। তিনি তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন অমর একুশে হলের ১০২ নম্বর কক্ষে। মো. ফরহাদ উদ্দিন ওরফে আবির বর্তমানে আইকন প্লাস বগুড়া শাখার পরিচালক।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতিতে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। আর এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তার কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
একাধিক ভর্তিচ্ছু জানিয়েছেন, ওই পরিচালক তাদের এবং অভিভাবকদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে কোন চিন্তা না করার অনুরোধ করেন। শুধু তার কোচিংয়ে ভর্তি হলে তিনি ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র পক্ষ থেকে আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন একটু বিজি (ব্যস্ত) আছি রাতে ফোন দিয়েন। তবে আইকন প্লাস বগুড়া শাখার পরিচালক কিনা সেটি জানতে চাইলে-তথ্যটি সঠিক বলে জানান তিনি। তবে এর বাইরে কিছু বলতে চাননি আবির।
এদিকে আইকন প্লাস মূল শাখায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা এমনটা হওয়ার কথা না বলে জানান।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে আবির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে ভর্তির শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী তার চতুর্থ বর্ষ হওয়ার কথা ছিল। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে পড়ার কারণে তিনি প্রযুক্তিক্ষেত্রে বেশ দক্ষ। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন পড়াশুনা না করে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র জালিয়াতির চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন আবির। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হলে বগুড়া গিয়ে কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, নিজের কোচিংয়ের প্রচারণা চালাতে গিয়ে ফ্রান্সের বিখ্যাত ফুটবলার জিনেদিন জিদানের পোস্টার নকল করেছেন আবির। তিনি বর্তমানে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার একটি পোস্টার হুবহু নকল করেছেন আবির। সেখানে জিদানের স্টাইলে তাকে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে।
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৫ বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র মো. ফরহাদ উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এস এম ইমরুল কায়েস শুভ এবং চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের দ্বীন মোহাম্মদ সোহেলকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বগুড়ার একাধিক ভর্তিচ্ছু জানিয়েছেন, মো. ফরহাদ উদ্দিন বর্তমানে আবির নামে পরিচিত। তার আসল নাম ব্যবহার করেন না। ডাকনাম আবির হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মওসুম আসার আগেই তিনি ভর্তিচ্ছুদের নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন বলে জানান। আবিরের কোচিংয়ে ভর্তি হলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এমনটাই জানান ভর্তিচ্ছু অনেকেই।