চুয়াডাঙ্গায় বাবা-ছেলেসহ পাঁচজন নিখোঁজ, নেপথ্যে কী
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাবা-ছেলেসহ পাঁচ স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাসস্ট্যান্ড মুক্তমঞ্চে তাদের সন্ধানের দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, পাঁচ কেজি স্বর্ণ লুটের একটি ঘটনার পর স্থানীয় একটি চক্র তাদের স্বজনদের ডেকে নিয়েছে, এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনও কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি।
মানববন্ধনে ওই পরিবারের সদস্যরা বলেন, জীবননগর থানায় মামলা করার ১০ দিন পার হলেও এখনও পুলিশ নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পারেনি। কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশের কাজে হতাশা প্রকাশ করেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের মাঝে ফিরিয়ে না দিলে গ্রামবাসীকে নিয়ে বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
নিখোঁজরা হলেন, গোয়ালপাড়া গ্রামের হাসান আলী, মমিন হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ স্বপন (৪০), আতিয়ার রহমানের ছেলে আবুল হোসেন (৩০), মোহাম্মদ আনার হোসেন (৫২) ও তার ছেলে শফি উদ্দীন (২৭)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভারতীয় চোরকারবারিরা জীবননগরের প্রভাবশালী স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান করে থাকেন। গত ১২ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে গোয়ালপাড়া বাজার থেকে পাঁচ কেজি স্বর্ণ লুটের ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তী দুই দিনে ওই গ্রামের পাঁচজনকে ডেকে নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের স্বজনরা দাবি করেছেন, নিখোঁজ পাঁচজনই সাধারণ কৃষক। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক দলের নেতা আব্দুল মজিদ তাদের ডেকে নিয়েছিলেন।
বাদী শওকত আলী জীবননগর থানায় ২১ অক্টোবর ছয়জনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল হাকিম ফকিরের তিন ছেলে, আব্দুল মজিদ (৪০), আব্দুস সামাদ (৪৫) ও বিপ্লব হোসেন (৫০); মনসুর আলীর ছেলে লালন মণ্ডল (৪২), ডাবলুর ছেলে শাহিন (৩২) এবং মৃত এম এ বারীর ছেলে মো. মিজানুর রহমান রুবেল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়ালপাড়া ও নতুনপাড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, আব্দুল মজিদ প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় চলেন। ওই নেতার নির্দেশে পূর্ব শত্রুতার জেরে ভারতীয় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর পাঁচ কেজি স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছে। সেই স্বর্ণগুলো বহন করছিল রুবেল ও শাহিন। তাদের ধারণা, এসব স্বর্ণ ফেরত না দেওয়ায় ভারতীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাংলাদেশি লোকজন ওই পাঁচজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়াও হতে পারে।
নিখোঁজ হাসানের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জানিয়েছেন, গত ১৩ অক্টোবর আনার ও তাঁর ছেলে শফি নিখোঁজ হন। ১৪ অক্টোবর হাসান, আবুল ও স্বপন নিখোঁজ হন। তাঁর স্বামী (হাসান) ১৪ অক্টোবর সকালে বাড়িতে ছিলেন। এ সময় আদালতে সাক্ষী দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে যান মজিদ, রুবেল, শাহিন ও লালন। এর পর থেকে তারা কেউই আর ফেরেননি। মজিদ ও তাঁর লোকজনের কাছে খোঁজ জানতে চাইলে তারা বলেছিলেন, দুয়েক দিনের মধ্যে তারা ফিরে আসবেন। কয়েক দিন পার হওয়ার পরও না ফেরায় তারা বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করেন।
জীবননগর উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, এটি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক বিষয়। দলের পক্ষ থেকে কোনো দায় নেওয়া হবে না।
জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, প্রাথমিক তদন্তে নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটনের আশা রয়েছে।