১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৪৬

রামগঞ্জে মা-মেয়ের হত্যার রহস্য উন্মোচন: নিকট আত্মীয়ই মূলহোতা

ঘাতক পারভেজ হোসেন  © টিডিসি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূ ও মেয়ের বাবা ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের ভাগিনা পারভেজ হোসেনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আটক পারভেজ রামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপুর মহাদের বাড়ির মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী এবং সম্প্রতি দুই মাসের ছুটিতে দেশে আসেন।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকতার হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যার আগে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘পারভেজ দুই মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরে। দেশে ফিরে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। এনজিও ঋণ ও ব্যাংকে আটকে থাকা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এ অভাবের সুযোগে মামার বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার নেওয়ার পরিকল্পনা করে।’

এসপি আকতার হোসেন জানান, গত ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টা থেকে ৩টা ১৫ মিনিটের মধ্যে পারভেজ রামগঞ্জ বাজার থেকে একটি চাকু কিনে মামার বাড়ি উত্তর চণ্ডিপুরে যান। সেখানে মামি জুলেখা বেগম ও মামাতো বোন তানহা আক্তার মীম তাকে আপেল ও আমড়া খেতে দেন। একপর্যায়ে মীম তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে গেলে, মীম তার হাতে থাকা চাকু দেখে চিৎকার দেয়। এতে ভয় পেয়ে যায় পারভেজ। মীম বিষয়টি মামাকে জানাতে পারে—এই আশঙ্কায় পারভেজ এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে মীমকে হত্যা করে।

এরপর নিচে থাকা মামিকে বলে, ‘মীম আপনাকে ডাকছে।’ মামি উপরে উঠলে, পেছন থেকে প্লেট ও টি-টেবিল দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং পরে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর আলমারির তালা ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় সে। ব্যবহৃত চাকু, ফলের বীজ, ও অন্যান্য আলামত পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের পর পারভেজ নিজের রক্তমাখা পোশাক খুলে ব্যাগে রেখে মামাতো ভাইয়ের জামা-প্যান্ট পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর সরাসরি লক্ষ্মীপুরের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কিছু স্বর্ণ বিক্রি করে এবং বাকি অংশ নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়।

রামগঞ্জ থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যৌথ অভিযানে ১৬ অক্টোবর সকালে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন মনিরের গ্যারেজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৬ ভরি ৪ আনা স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।

তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে পুলিশ হত্যার সময় পরিহিত গেঞ্জি ও প্যান্ট, ঘটনার পর ব্যবহৃত পোশাক এবং লক্ষ্মীপুরের দোকান থেকে বিক্রিত ১ ভরি স্বর্ণও উদ্ধার করে।

এসপি মো. আকতার হোসেন বলেন, পারভেজ একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তার জবানবন্দিতে পুরো ঘটনার বিস্তারিত পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর সার্কেল) মো. জামিলুল হক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যার পর রামগঞ্জ উপজেলার উত্তর চণ্ডিপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে জুলেখা বেগম (৪০) ও তার মেয়ে তানহা আক্তার মীমকে (১৭) গলা কেটে হত্যা করা হয়। বাসায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেওয়া হয়। রাতে পরিবারের সদস্যরা বাসায় ফিরে গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।