০৪ মে ২০১৯, ১৭:১২

৩৩ হাজার টাকা পাওনা, পরিশোধে সাড়া নেই ছাত্রলীগ নেতার

অভিযু্ক্ত ছাত্রলীগ নেতা রুম্মান

ছাত্রত্ব নেই তবু হলে থাকছেন, আবার টাকা ধার নিয়ে দেড় বছর পেরুলেও তা পরিশোধ করছেন না ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাবেক সহ-সভাপতি মো. রুম্মান হোসেন। তার বাড়ি বরিশালে, তিনি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসানের অনুসারী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী। তিনি এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২১৮ নাম্বার রুমের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু হলের দোকানী মুনিরের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা গচ্ছিত রাখা শুরু করেন রুম্মান। সে টাকা ফেরত নেওয়া শেষ হলে মুনিরের কাছে ১ ঘন্টার জন্য ১০ হাজার টাকা ধার চান তিনি। সরল মনে মুনির তাকে টাকা দেন। কিন্তু এর পরই ঘটে বিপত্তি।গত দেড় বছরে বিভিন্ন সময়ে টাকা চেয়েও রুম্মানের কাছ থেকে টাকা ফেরত পান নি মুনির। শুধু ধারের ১০ হাজার টাকাই নয়, মুনির রুম্মানের কাছে দোকানের বাকি বাবদ আরও সাড়ে ১৯ হাজার টাকার মতো পান। বারবার সময় নিয়েও এ সাড়ে ২৯ হাজার টাকা ফেরত দেননি রুম্মান।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী আবুল হাসানের কাছ থেকে একই কায়দায় ১৭০০ টাকা নিয়ে সে টাকাও ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রুম্মানের বিরুদ্ধে। এর বাইরে কবির নামে একজন সংবাদপত্র বিল বাবদ তার কাছে প্রায় ২ হাজার টাকা পাবেন এবং সে টাকা অপরিশোধিত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দিন-মাস-বছর পেরুলেও ধার ও বাকি বাবদ প্রায় ৩৩ হাজার টাকা পরিশোধ করছেন না এ ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা পরিশোধ না করার অনেক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আছে জুয়া খেলার অভিযোগও। এছাড়াও কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে আঙ্গুল তুলে শাসিয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রুম্মান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ধারের টাকার পাশাপাশি তিনি অনেক টাকা বাকি খেতেন মুনীরের দোকান থেকে। এছাড়া তার নাম করে মুনীরের দোকান থেকে আরো অনেকে বাকি খেতেন বলে জানা গেছে। এর মাঝেই মুনির বেশ কয়েকবার তাকে টাকা দেয়ার জন্য তাগাদা দিলেও তিনি টাকা দিতে গড়িমসি করেছেন। উল্টো বেশ কিছুদিন মুনিরের দোকান থেকে খাওয়া বন্ধ করে দেন। তবে এখন আবার মুনীরের দোকানে নিয়মিত হয়েছেন তিনি।

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে দোকানী মুনির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, রুম্মান হোসেনের কাছে তিনি প্রায় ২৯ হাজার টাকা পান। কিন্তু বারবার টাকা চেয়েও তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করতে পারি নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দোকানের কর্মচারীদের বেতন এবং নিজের পরিবারের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়। তাই তাকে (রুম্মান) টাকা দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। তিনি কয়েক দফা সময় নিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত টাকা দেননি।আত্মসম্মানবোধ থাকলে নিজ থেকে এসে রুম্মান তাকে টাকা বুঝিয়ে দিবেন বলে বিশ্বাস করেন মুনির।

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু হলের নিরাপত্তাকর্মী আবুল হাসানও। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, তিনি আমার কাছ থেকে ১৭০০ টাকা নিয়েছেন। এক বছরের বেশি অতিবাহিত হলেও সে টাকা ফেরত দেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুম্মান হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মনির ভাই আমার কাছে টাকা পায়। তার সাথে আমার টাকা দেওয়া-নেওয়ার একটা লেনদেন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আমার টাকা পয়সা আটকে যাওয়াতে সমস্যা হয়েছে। তবে আমি ছাত্রলীগের নেতা বলে তার টাকা জোর করে নিয়ে রাখেনি। আমার সমস্যা হয়েছে সেজন্য আমি টাকা দিতে পারতেছি না। তবে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি তার টাকা দিয়ে দিব।

হলের নিরাপত্তাকর্মী আবুল হাসানের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে টাকাটা অন্য একজন আমার নাম করে তার কাছ থেকে নিয়েছে। তখন আমি হাসান ভাইকে বলছি ঐ টাকাটা আমি দিব। কিন্তু টাকা পয়সার সমস্যার কারণে আমি ওই টাকাটা দিতে পারিনি।

ছাত্রত্ব না থাকার পরও কিভাবে হলে থাকছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে হলে আমার অনেক বন্ধুরা আছে, যাদের ছাত্রত্ব নাই। এছাড়া ছাত্রত্ব না থাকা আরো অনেকেই হলে থাকছে। তাহলে আমি কেন থাকতে পারবো না! হলে না থাকলে আমি থাকব কোথায়!

সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে কোন টাকা-পয়সা খাইনি।

তিনি আরো বলেন, আমার প্রতিপক্ষরা আমার পার্সোনাল ইস্যুগুলোকে সামনে এনে রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মফিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এই বিষয়গুলো আমি আসলে আগে জানতাম না। এখনই জানলাম। আমরা অছাত্রকে হলে থাকতে দিবো না । সে যদি অছাত্র হয় তাহলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব। টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি আসে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব।