এক ক্লিকে লাখ টাকা জেতার স্বপ্নে নিঃস্ব হাজারো তরুণ
দেশজুড়ে অনলাইন জুয়া নতুন আতঙ্ক হিসেবে ছড়িয়ে পড়লেও সীমান্তবর্তী বেনাপোলে এ মরণব্যাধির ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পুরো একটি প্রজন্ম। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গেছে জুয়ার ধরনও। সহজে আয় করার লোভ, গোপন পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জনের ফাঁদ এবং এক ক্লিকে লাখ টাকা জেতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতিদিনই শত শত তরুণ নিঃস্ব হয়ে ফিরছে।
শার্শা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত অনলাইন জুয়ার প্রভাব এখন তীব্র। শিক্ষার্থী, শ্রমিক, রিকশাচালক, দোকানি, হকার, ভবঘুরে, সিএনজি চালক, গৃহকর্মী—সব শ্রেণি-পেশার মানুষই জড়িয়ে পড়ছেন এই জুয়ায়। বাগআঁচড়া, গোগা, কায়বা, বেনাপোল, শার্শা, উলাশী, লক্ষণপুরসহ শার্শার প্রায় সব ইউনিয়নেই দিন-রাত চলছে মোবাইল স্ক্রিনে বাজির লেনদেন।
অনলাইনে বাজি ধরার প্রথম ধাপে কেউ ১ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে তা গিয়ে ঠেকে ১০ হাজার, এমনকি লক্ষ টাকায়। সর্বস্ব খুইয়ে হতাশায় পড়ছেন অনেকে, কেউ আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন টাকার সংস্থান করতে গিয়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনলাইনে টাকা হারিয়ে অনেক তরুণ চুরি, ছিনতাই, এমনকি সংঘবদ্ধ গ্যাং গঠন করে মাদক বা চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে লুটপাটে জড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলার ভুক্তভোগী আনারুল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাসে যশোর যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাং চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে আমার কাছে থাকা সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখন আমরা অনিরাপদ জীবন কাটাচ্ছি। আগে চিহ্নিত চোর-ডাকাতদের ভয় ছিল, আর এখন উঠতি বয়সী কিশোররা গ্যাং তৈরি করে একই কায়দায় লুটপাট করছে। মাদক ও অনলাইন জুয়ার টাকার নেশাই তাদের এই বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে।
অন্যদিকে বেনাপোলের আরাফাত রহমান বলেন, ‘মোবাইলে জুয়া খেলে টাকা ইনকামের নেশায় কিশোর-তরুণরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। আর সেই টাকার যোগান দিতে গিয়ে তারা চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে আছি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।’
নিঃস্ব হওয়া আরেক যুবক আব্দুল্লাহ সাংবাদিককে জানান, ‘নেশায় পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়েছি। ধার করে খেলেছি এখন দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি। কেউ টাকা দিতে চায় না; আমরা এখন সব হারিয়ে দিশেহারা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অনলাইন জুয়া আমাদের সমাজের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে নানা ধরনের অপরাধ যেমন চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং সক্রিয়তা জড়িত। এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা ইতোমধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’