যৌন হয়রানির কারণে দাখিল পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছিল নুসরাতের
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার অনেক আগে থেকেই নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে। এমনকি তাকে লক্ষ্য করে চুন মিশ্রিত গরম পানিও ছুড়ে মারা হয়েছিল। এতে তার চোখ-মুখ ঝলসে যায়। ওই অবস্থায় দাখিল পরীক্ষা দিলেও কাঙ্খিত রেজাল্ট পায়নি নুসরাত।
অনেকের অভিযোগ, দেশে নারীর প্রতি নির্যাতন ও হেনস্তা করা এখন অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া একজন নারীর প্রতি বাংলাদেশের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তা করলে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। এখানে নারীর সংগ্রাম তাকে একাই করতে হয়। নারীর বিপদে সমাজের মানুষের সহমর্মিতা তো দুরের কথা, বরং নিজের চেনা মানুষগুলোর অচেনা আচরণ কাটিয়ে উঠতে নারীকে পোহাতে হয় এক পাহাড়সম দুর্দশা।
ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার নুসরাত জাহান রাফি এমনই এক সংগ্রামী কিশোরীর নাম। ২০১৭ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেরা তার মুখে চুনের পানি মেরে পালিয়ে যায়। এতে ঝলসে যায় তার মুখ। পরবর্তী কয়েকটি পরীক্ষা তিনি হাসপাতালে বসেই দেন।
এরপর পোড়া মুখ নিয়ে মাথায় ওড়না পেচিয়ে একটা পরীক্ষা দিতে তিনি উপস্থিত হন পরীক্ষা কেন্দ্রে। বখাটেরা চেয়েছিলো তার জীবন সংগ্রাম সেখানেই থামিয়ে দিতে। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে হার না মানা নুসরাতের সাহসিকতা দেখে ২০১৭ সালেই অবাক হয়েছিলেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার আগে পড়ালেখা করেছেন স্থানীয় খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসায়। সেখান থেকেই ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দিয়ে রিক্সায় বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় কাশ্মীর বাজার সড়কের সিদ্দিক বাড়ির সামনে পৌঁছলে পাশের দেয়ালের অপর পাশ থেকে চুন মেশানো গরম পানি ছাত্রীটির গায়ে নিক্ষেপ করে। এতে তার চোখ ও মুখ ঝলসে যায়।
পিবিআইয়ের তথ্য মতে, নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম বারবার নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বখাটে শামীমের প্রস্তাবে কোনোভাবেই নুসরাত রাজি না হওয়ায় নুর উদ্দিনসহ তখন নুসরাতের মুখে চুন মারে শামীম।
এ অবস্থায় যন্ত্রণায় সে চিৎকার করতে থাকলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় নুসরাতকে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে বসেই চলমান পরীক্ষায় অংশ নেয় নুসরাত। হাসপাতাল থেকে এসে মুখের পচন্ড যন্ত্রণা নিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে সে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিদর্শনে এসে নুসরাতের সাহসিকতায় অবাক হন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে রাফির মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, আমি আশ্চর্য হয়েছি চোখে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া নিয়ে নুসরাত সাহসিকতার সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
এদিকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জীবনে ঘটে এত বড় ঘটনার কারণে কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট পাননি নুসরাত। নুসরাতের সহপাঠীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পাওয়ার মত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। শিক্ষকরাও তার থেকে ওরকম রেজাল্ট আসা করেছিলো। হাসপাতালে থেকে এবং মুখে জালা পোড়া নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে নুসরাতের রেজাল্ট আসে জিপিএ ৪.০৫।