৩ লাখ টাকার মুক্তিপণের লোভে মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা, জড়িত অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষার্থী
৩ লাখ টাকার মুক্তিপণকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ডেমরার ডগাইর এলাকার নূরে মদিনা মাদ্রাসার ছাত্র মনির হোসেন (৮)কে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদী ও দুই সিনিয়র ছাত্র মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশের পরিচয় লুকাতে চোখ উপড়ে ফেলা হয়।
পরিকল্পনা করা হয় লাশটি দুরে কোথায়ও ফেলে দিয়ে রাখা হবে। কিন্তু এলাকায় পুলিশের তল্লাশি বেড়ে যাওয়ায় মসজিদের শিড়িতেই শিশু মনিরের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাদি। কিন্তু তার পালানোর আগেই পুলিশ তাকে সন্দেভাজন মনে করে আটক করে। আটকের পর পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
এদিকে, শিশু মনিরের বাবা সাইদুল হক ওই তিনজনকে আসামি করে মঙ্গলবার ডেমরা থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অপর দিকে, শিশু মনির হত্যার জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী বিকালে মাদ্রাসার এলাকায় মানববন্ধন করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডেমরা থানা পুলিশ জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ হাদি হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছে, তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে শিশুটিকে রবিবার বিকালে মাদ্রাসা ছুটির পর অপহরণ করা হয়। এরপর অধ্যক্ষ হাদির নির্দেশে মাদ্রাসার ছাত্র ১৪ বছর বয়সী তোহা ডগাইরের নতুনপাড়া এলাকার একটি ফোনের দোকান থেকে ফোন দিয়ে মনিরের বাবার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। এদিকে অধ্যক্ষ হাদি মুক্তিপনের কথা পুলিশকে জানালে অপহরণকারীরা হত্যা করতে পারে বলে ভয় দেখান শিশুটির পরিবারটিকে।
হাদি শিশুটির পরিবারকে বলেন অপহরনকারীরা যেভাবে বলেছে সেভাবে মসজিদের খাটিয়ার নিচে দাবি করা এক লাখ টাকা রেখে আসতে। অপর দিকে অপহরণের পর শিশুটিকে তিনি তার কক্ষেই আটকে রাখেন। তবে শিশুটি উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করায় মুক্তিপণ না নিয়েই অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদী ওরফে হাদিউজ্জামান তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। আর হত্যার সময় তাকে সহযোগীতা করে মাদ্রাসার দুই সিনিয়র ছাত্র মোহাম্মদ তোহা ও আকরাম হোসেন।
শিশু মনিরের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, অধ্যক্ষ হাদি ওই মাদ্রাসার মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন। শিশু মনির মসজিদের ইমামের কাছে আরবি পড়তো। রবিবার আরবি পরতে গিয়ে শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরদিন সোমবার তাদের কাছে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে যে মনিরকে অপহরণ করা হয়েছে। নিতে হলে ৩ লাখ টাকা লাগবে। মনিরের বাবা এক লাখ টাকা দিতে পারবে জানালে তার রাজি হয়। কোথায় দিতে হবে জানতে মনিরের বাবা ওই নম্বরে কল করলে অপহরণকারী তাকে ডেমরার ডগাইর এলাকার নতুন পাড়া জামে মসজিদের কাছে আসতে বলে এবং টাকাগুলো কোথায় দেয়া হবে উত্তরে তারা মসজিদের ভেতর ফেলে যেতে বলে, তারা মসজিদে টাকা না ফেলে আবার নাম্বারে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলা হয় এবং একজন মহিলা এসে টাকা নিবে বলে কল কেটে দেয়।
তখন ওই মহিলাকে মনিরের পরিবার আটক করে। তবে সে মনিরের খোঁজ দিতে পারেনি। এরপর মনিরের পরিবার পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে জানতে পারে ওই মোবাইল নম্বরটি মসজিদের আশে পাশেই রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়। পুলিশ এলাকায় অভিযান চালায়। ব্যাপক তল্লাশির এক পর্যাায়ে মসজিদের সিড়িতে একটি বাজারের মোড়ানো ব্যাগ পাওয়া যায়। আর ব্যাগটি খুলতেই বেরিয়ে আসে শিশু মনিরের লাশ।
তার লাশের দুটি চোঁখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ তখন নিশ্চিত হয় ইমাম এই হত্যায় জড়িত। এদিকে, শিশু মনির হত্যার জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী মঙ্গলবার বিকালে মাদ্রাসার এলাকায় মানববন্ধন করেন।