১৭ জুলাই ২০২৫, ২২:৩৫

জেলের ছদ্মবেশ ধারণ করেও রক্ষা হল না এসিড নিক্ষেপ মামলার আসামির

এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় অভিযুক্ত জসীমকে গ্রেপ্তার করেন ছদ্মবেশ ধারণকারী পুলিশ সদস্যরা  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

যশোরের ঝিকরগাছায় এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় অভিযুক্ত জসীম (৪০) অবশেষে জেলের ছদ্মবেশ ধারণ করেও ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে। শিশু সন্তানের সামনে এক নারী, তার মা ও ছোট ভাইয়ের ওপর এসিড হামলার ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকলেও পুলিশের তৎপর অভিযানে শেষ রক্ষা হয়নি তার।

পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে প্রায় ছয় বছর আগে নাভারণ এলাকায় বিয়ে হয়। তবে দাম্পত্য কলহের জেরে প্রায় আট মাস আগে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে চার বছরের শিশুকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। একই এলাকায় বসবাসকারী জসীম, যিনি একজন দিনমজুর হিসেবে পেঁপে বাগানে কাজ করতেন এবং ভুক্তভোগীর প্রতিবেশীর আত্মীয়, তার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পায়। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে একতরফা প্রেম।

একপর্যায়ে জসীম ওই নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি ও তার পরিবার তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৩ জুলাই রাতে, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে, ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এসিড ছুড়ে মারেন ভুক্তভোগীর ওপর। এতে নারী, তার মা ও আট বছর বয়সী ছোট ভাই দগ্ধ হন। চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এলে জসীম পালিয়ে যান।

আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর বাবা ঝিকরগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হওয়ায় যশোরের পুলিশ সুপার অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে একাধিক টিম মাঠে নামে।

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জুলাই পুলিশের একটি টিম জানতে পারে, আসামি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানাধীন আমাদাহ নামক স্থানে অবস্থান করছে। পুলিশ অভিযানে গেলে দেখা যায়, সে অবস্থান বদলে এক পর্যায়ে কামাল প্রতাপ নামক বিশাল বিলের মাঝে আশ্রয় নিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, সেখানেই সে খাওয়া-দাওয়া সহ সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল এবং মাঝে মধ্যে বিল থেকে বাইরে আসছিল।

পরিস্থিতি বুঝে এসআই তাপসের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল জেলের ছদ্মবেশ ধারণ করে বিলের মাঝে পৌঁছায়। বিকেল আনুমানিক ৪টা ১০ মিনিটের দিকে পুলিশকে দেখে জসীম পানিতে ঝাঁপ দিলে এসআই তাপসও পিছনে ঝাঁপ দেন। এরপর পানির মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তিনি।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসীম ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে তাকে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।