১২ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪৪

অপরাধী যে দলেরই হোক কোনো ছাড় নেই: র‍্যাব মহাপরিচালক

র‍্যাব মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান  © টিডিসি ফটো

অপরাধী যে দলেরই হোক, যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, তার কোনো রেহাই নেই— এমন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) একেএম শহিদুর রহমান। আজ শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘মিটফোর্ড এলাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে, তা অত্যন্ত নৃশংস ও ভয়াবহ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। মামলার ছায়া তদন্ত চলছে। এখনই বিস্তারিত কিছু বলার সময় নয়, তবে বাকি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও আমাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।’

প্রাথমিক তদন্তের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় চাঁদাবাজি কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।’

স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অপরাধীর পরিচয় একটাই— সে একজন অপরাধী। তার রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাব-প্রতিপত্তি, অবস্থান— এসব আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরও জানান, ‘৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি এবং অভিযানের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতামুক্ত একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব।’

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচিত গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব ডিজি বলেন, ‘আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। মব সন্ত্রাস করে অন্যায়ভাবে কোনো দাবি আদায়ের সংস্কৃতি চলতে দেওয়া যায় না। এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে, রড-ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকলেও হামলাকারীরা থেমে থাকেনি লাফিয়ে, লাথি মেরে চলতে থাকে নিষ্ঠুরতা।

ঘটনাটি ঘটে শতাধিক মানুষের সামনে। কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের ক্যাম্প ছিল কাছেই, কিন্তু তারাও নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সেই ভয়াবহ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয় সর্বস্তরের মানুষ।