১২ জুলাই ২০২৫, ১৩:২০

পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে নেপাল যাচ্ছিলেন ছেলে, মা ফোন করে জানান— ‘বিমানে বোমা আছে’

ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটে বোমা আতঙ্ক  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের ফ্লাইটে বোমা রয়েছে এমন তথ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে একটি অচেনা নম্বর থেকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করা হয়। কল পেয়ে তৎক্ষণাৎ উড়োজাহাজের যাত্রা স্থগিত করা হয়। বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে বোমা সংক্রান্ত কোনো ধরনের বস্তু পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনার তদন্তে নামে র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

আজ শনিবার (১২ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম কে এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পেছনে পারিবারিক বিরোধ জড়িত এবং ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

র‍্যাব ডিজি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত শুরু করি। সারা রাত অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এই ঘটনায় সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আমাদের সহায়তা করেছে।’

আরও পড়ুন: শাহজালালে বোমা আতঙ্ক, স্থগিত ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইট

তদন্তে বেরিয়ে আসে, ইমন নামের এক ব্যক্তি তার পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটে করে নেপাল যাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পারেন ইমনের স্ত্রী ও মা। তারা ছেলেকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ইমনের বন্ধু ইমরান পরামর্শ দেন, যদি বোমা থাকার তথ্য দিয়ে ফোন করা হয়, তাহলে ফ্লাইট বাতিল হতে পারে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমনের মা নিজেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে জানান বিমানে বোমা রয়েছে।

র‍্যাব ডিজি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গর্হিত ও দুঃখজনক ঘটনা। এই এক ফোনকলের কারণে শুধু ফ্লাইট স্থগিত হয়নি, দেশের ভাবমূর্তি, বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না, এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঘটনার সময় বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে ১৪২ জন যাত্রী ও ৭ জন ক্রু ছিলেন। ফ্লাইটটি তখন রানওয়েতে ট্যাক্সি করছিল। ঠিক তখনই বোমা থাকার হুমকি আসে। সঙ্গে সঙ্গে বিমান বাহিনীর টাস্ক ফোর্স ও এভসেক (AVSEC) উড়োজাহাজের চারপাশ ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, এপিবিএনের ডগ স্কোয়াড এবং পরে র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে ফ্লাইটের ভেতর ও লাগেজে তল্লাশি চালায়।

সমস্ত যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে স্ক্রিনিং শেষে লাউঞ্জে নেওয়া হয়। রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে তল্লাশি শেষ হয় এবং নিশ্চিত করা হয়, বিমানে কোনো ধরনের বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

বোমা আতঙ্কের কারণে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি দেশীয় বিমান চলাচলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের গুজব ছড়ানো যে কতটা ক্ষতিকর তা তুলে ধরেই র‍্যাব ডিজি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও একটি দেশের সুনামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেউ এভাবে ভুয়া তথ্য দিয়ে ছেলেখেলা করলে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।’