১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০৬

লাইভ ক্লাসে অশ্লীলতা: এবার লিগ্যাল নোটিশ পেল সেই কোচিং সেন্টার

ভিডিও থেকে স্কীনশর্ট ও প্রতিষ্ঠানটির লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্রস্তুতির প্ল্যাটফর্ম ‘অন্বেষণ’ শিক্ষার পরিবেশে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে এবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। 

আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অনলাইন লাইভ ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকার আপত্তিকর আচরণের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দীন আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন। 

নোটিশে বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষকরা সেই জাতি গঠনের কারিগর। কিন্তু ‘অন্বেষণ’-এর শিক্ষক-শিক্ষিকারা লাইভ ক্লাসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মাধ্যমে যে আচরণ করেছেন, তা কোনোভাবেই শিক্ষার মর্যাদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক ও শিক্ষিকার চুম্বনের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে তারা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আশ্রয় নিয়েছেন। এর ফলে শুধু শিক্ষার পরিবেশই কলুষিত হয়নি, বরং সমাজে পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধমূলক উপাদান ছড়ানোর ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন: কোচিংয়ের লাইভ ক্লাসে অশ্লীলতা, স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওতে তোলপাড়

নোটিশে আরও বলা হয়, নোটিশ গ্রহীতা ১ ও ২ নম্বর ব্যক্তি হচ্ছেন ‘অন্বেষণ এডু’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের স্বত্বাধিকারী। তাদের ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত ভিডিওতে ৩ ও ৪ নম্বর লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতা—একজন পুরুষ ও একজন নারী শিক্ষক—হিসাববিজ্ঞান ক্লাস নেওয়ার সময় সরাসরি পরস্পরের চুম্বনের দৃশ্য সম্প্রচার করেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

নোটিশে আইনের দৃষ্টিতে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২–এর ২(গ)(১) ধারায় পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে—যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য, যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধারণ ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শিক্ষাগত বা শৈল্পিক মূল্য নেই—তা পর্নোগ্রাফির আওতায় পড়ে।

একই আইনের ৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করেন, তবে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

৮(৫) ধারায় আরও বলা হয়, কেউ যদি পর্নোগ্রাফি বিক্রি, বিতরণ, সরবরাহ, প্রদর্শন বা প্রচার করেন কিংবা সেই উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ, পরিবহন বা উৎপাদন করেন, তিনিও একই দণ্ডের আওতায় পড়বেন।

আরও পড়ুন: কোচিংয়ের লাইভ ক্লাসে অশ্লীলতা ছড়ানোয় এবার থানায় অভিযোগ

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. মহিউদ্দীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর। তাদের কাছে অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ সকলের প্রত্যাশা বেশি। নৈতিকতাবিবর্জিত শিক্ষককে কেউ পছন্দ করেনা। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ আসছে; কিন্তু প্রকাশ্যে এভাবে কেউ লাইভ ভিডিও তে এই রকম অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেনি। এই ঘটনায় অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদেরকে এই মুহুর্তে না থামালে কিছুদিন পর ভিউ ভাড়াতে অনেকেই এই অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিবে, যার নেতুবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের সমাজে।

এর আগে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘অন্বেষণ’ কোচিং সেন্টারের ইউটিউব চ্যানেল থেকে পাওয়া যায়। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির হিসাববিজ্ঞানের এক নারী ও এক পুরুষ শিক্ষককে লাইভ ক্লাস চলাকালীন চুম্বনের দৃশ্যে দেখা যায়। পরে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওতে তাদের অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ প্রকাশ্যভাবে শিক্ষার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে বলে মনে করছেন অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ দর্শকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির দুই মালিক আকাশ ও অর্ক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের হিসাববিজ্ঞানের দুইজন শিক্ষক সম্প্রতি এই অনভিপ্রেত কাজটি করেছেন। এতে আমরা অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত। আমাদের ইউটিউব ও ফেসবুক পেইজের এক্সেস আমরা শিক্ষকদের দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে এমন অপেশাদার আচরণ করবেন, তা আমরা ভাবতেও পারিনি। আমরা এই ঘটনার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীসহ সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’