২০ মার্চ ২০১৯, ২১:৪২

গাঁজা খেয়ে গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করলেন সিরাজুল

ঘাতক বাস চালক সিরাজুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার চৌধুরীকে চাপা দেয়া বাস চালক সিরাজুল ইসলাম প্রতিনিয়ত মাদকদ্রব্য সেবন করতেন। সে নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন বলে জানিয়েছেন। গাঁজা সেবন করা ছাড়া গাড়ি চালাতে পারেন না ওই ঘাতক বাস চালক সিরাজুল। গাঁজা খেয়ে ও সারা রাত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন বাস চালক সিরাজুল।

বুধবার সিরাজুলকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী। পরে তাকে আদালত থেকে হাজতে নেয়া হয়। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় সিরাজুলের।

সিরাজুল বলেন, সেদিন সারা রাত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। রাত জাগার কারণে মাথা ঠিক ছিল না। প্রথমে একটি মেয়ে গাড়ি চাপা পড়লে বাঁচার জন্য দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকি। তখন মনে ভয় কাজ করছিল। কিছুটা দূরে আরেকজনকে (আবরার) আবার চাপা দেই। তার মাথার ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা ওঠে যায়।

তিনি বলেন, শাহাজাদপুর বাঁশতলায় একটি গাড়িকে ক্রস করার সময় মুক্তা নামের এক মেয়েকে ধাক্কা দেই। এতে গুরুতর জখম হয় সে। সেই মুহূর্তে মনের মধ্যে ভয় কাজ করছিল। মাথা ঠিক ছিল না। বাঁচার জন্য আরও দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকি। কিছুক্ষণ পর আইকন টাওয়ারের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ে এক শিক্ষার্থীর (আবরার) ওপর আবারও গাড়ি চাপিয়ে দেই। গাড়ির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে তার মাথা থেঁতলে যায়। পরে ট্রাফিক পুলিশ গ্রেপ্তার করে আমাকে।

গুলশান থানার ওসি (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে ঘাতক বাস চালক সিরাজুলকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে সিরাজুলকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন। সে গাঁজা সেবন ছাড়া গাড়ি চালাতে পারেন না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। গাঁজা খেয়ে ও সারা রাত জেগে গাড়ি চালানোর জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে আসামি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় ‘সুপ্রভাত’ নামে একটি বাসের চাপায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। এ ঘটনার পর ঘাতক বাস সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবিসহ আট দফা দাবিতে নানা স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বুধবারও রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ আন্দোলন হয়। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে এসে তাঁরা এই ঘোষণা দেন।

মেয়রের কাছে তাঁরা তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন। দাবি তিনটি হলো-১. ঘাতক বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি, ২. সুপ্রভাত ও জাবালে নুর বাসের লাইসেন্স বাতিল ও ৩. ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।

এদিকে স্থগিতের ঘোষণা না মেনে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বুধবার রাতে আন্দোলনরত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।