আন্দোলন চালানোর ঘোষণা চার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের
বাসচাপায় বিউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা শেষে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে এসে তাঁরা এই ঘোষণা দেন।
মেয়রের কাছে তাঁরা তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরেন। দাবি তিনটি হলো-১. ঘাতক বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি, ২. সুপ্রভাত ও জাবালে নুর বাসের লাইসেন্স বাতিল ও ৩. ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।
এদিকে স্থগিতের ঘোষণা না মেনে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বুধবার রাতে আন্দোলনরত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
তারা জানান, দোষী চালকের শাস্তিসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঘোষিত ৮ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকাল থেকেও তাদের সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকবে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কাওসার হাবিব বলেন, আমাদের সবগুলো দাবি নিয়ে প্রতিনিধি দল কথা বলেনি। যারা গেছে তারা আমাদের দাবি নিয়ে কথা বলেতে পারেনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রভাত বাস চালকের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া ও পাল্লাপাল্লি বাস চলাচল বন্ধসহ অন্যান্য দাবির দৃশ্যমান বাস্তবায়ন দেখতে চাই। না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আন্দোলনে থাকা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ফয়সাল কবির রাফি বলেন, ‘যে প্রতিনিধি দল মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছেন, তারা কেন্দ্রীয় কোনও কমিটি না। তারা মেয়রের সঙ্গে দাবি নিয়ে সঠিকভাবে কথা বলতে পারেননি। তারা আন্দোলনরত অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আন্দোলন স্থগিতের বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। যে কারণে দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার ১০টাতেও আমরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
বুধবারের ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপাচার্য মেজর জেনারেল এম এমদাদুল বারীসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিইউপি শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমরা ছাত্রদের নিয়ে মেয়রের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছি। সময় সাপেক্ষে মেয়র সাহেব আমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। আমরা বলেছি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট দিতে হবে। মেয়র বলেছেন, তিনি সেই ব্যবস্থা করবেন। দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তার জন্য যেখানে যা করা দরকার তার জন্য একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন মেয়র এবং পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবেন। এছাড়া স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কথাও বলেছেন তিনি। এজন্য আমরা পরবর্তী সাতদিন সময় দিচ্ছি। আগামী ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে আবার আমাদের বৈঠক হবে। তাই আজ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত সব ধরনের আন্দোলন আমরা স্থগিত করছি।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় ‘সুপ্রভাত’ নামে একটি বাসের চাপায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। এ ঘটনার পর ঘাতক বাস সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবিসহ আট দফা দাবিতে নানা স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বুধবারও রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ আন্দোলন হয়।