আ.লীগ নেত্রীর মেয়ের নাম জুলাই আহতের তালিকায়, প্রতিবাদ করায় কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম
জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকায় আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ের নাম যুক্ত করার প্রতিবাদ করায় নরসিংদীতে মিনহাজুর রহমান শ্রাবণ (১৭) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা মহিলা লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলমের স্বামী ও স্থানীয় ইউপি সচিব শাহ আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌর শহরের বিলাসদি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত মিনহাজুর রহমান শ্রাবণ (১৭) নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি সদর উপজেলার বাশাইল এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের ‘জুলাইযোদ্ধা’ তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসন। সেই তালিকায় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলম ও ইউপি সচিব শাহ আলম দম্পতির কন্যা রাইসা আলমের নাম যুক্ত করা হয়—যদিও আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ ছিল না।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে নরসিংদী সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। এরপর থেকেই আন্দোলনে সরব থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে দাবি করে সহপাঠীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে এক বন্ধুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে মিনহাজুর রহমান শ্রাবণের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শাহ আলম, তাঁর ভাই শাহেদ হোসেন এবং আরও অন্তত ২০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই ছাত্রের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামলাকারীরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ক্যাডার বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
আহত শিক্ষার্থীর এক সহপাঠী ও আন্দোলনকর্মী সাজিদ বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম। প্রকৃত আহতদের বাদ দিয়ে যারা নাম লিখিয়েছে, তাদের নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারই খেসারত দিতে হলো শ্রাবণকে। হামলার দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে।
অভিযুক্ত ইউপি সচিব শাহ আলম কিংবা তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসআই নজরুল ইসলাম জানান, “ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মোট চারজনকে আটক করেছি। তদন্ত চলমান রয়েছে, প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নরসিংদীর এই ঘটনায় জেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিবাদ ও বিচার দাবির ঝড় বইছে। ছাত্রদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের সন্তানদের নাম ঢুকিয়ে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের বাদ দেওয়া এবং পরে প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালানো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরই আস্থা হারানোর শামিল।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।