২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৩

ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণের ঘটনায় চবিতে সংঘর্ষ: আহত ১১

চবি ছাত্রলীগের দু‘পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি গোলাম রসুল নিশানকে অপহরণের অভিযোগে দু‘পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১১জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে দশটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মোড় থেকে তাকে অপহরণ করা হয় বলে দাবি করেছেন নিশানের অনুসারীরা। 

জানা গেছে, গোলাম রসুল নিশান সিটি মেয়র আ জ ম নাসিরের অনুসারী উল্কা গ্রুপের নেতা। অপরদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তরা একই নেতার অনুসারী সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন।

অপহরণের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত ১টার দিকে উল্কার নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট অবরুদ্ধ করে রাখে। এসময় তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত গেট অবরুদ্ধ করে রাখার ঘোষণা দেয়।

পরে রাত ২টার দিকে ক্যাম্পাসের মূল গেট থেকে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শাহজালাল হলের দিক থেকে ইট পাথর ছুঁড়তে থাকে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে সিক্সটি নাইনের কমপক্ষে ১১ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এরমেধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহতরা হলেন, সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শামীম, একই শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিদ্যা বিভাগের আনিস, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভয়,  আইইআর বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অর্ণব ইসলাম, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্রুব, আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ঈমাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মাহমুদ ইসলাম, একই বিভাগের মো: মামুন ইসলাম, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মিলন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাদ্দাম হোসেন এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের সৌরভ তালুকদার ।

উল্কার নেতাকর্মীদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এ কাজ করা হয়েছে। তাঁরা জানান, অপহরনের কয়েক ঘন্টা পর আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টাইগারপাসে ঝাউতলা স্টেশনের পাশের একটি পাহাড় থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় গোলাম রসূল নিশানকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) পাঠানো হয়। এসময় তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এছাড়াও প্লাস দিয়ে নখ তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। স্থানীয়রা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উল্কা গ্রুপের নেতা সুমন খান বলেন, ‘চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় মনসুর আলম, ইকবাল টিপু ও আবু তোরাব পরশের নেতৃত্বে নিশানকে অপহরণ করা হয়েছে। আমরা এর বিচারের দাবিতে মূল গেট অবরোধ করি। পরবর্তীতে তারা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এমনকি তারা আমাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য রকেট লঞ্চার ফুটায় এবং গুলি করে। পরে আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করে।’

জানতে চাইলে সিক্সটি নাইনের নেতা চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল টিপু বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে আমাদের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। বরং আমরা চাই, কারা অপহরণ করেছে সেটা তদন্ত করে বের করা হোক। কিন্তু এমন উড়ো অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের ঘুমন্ত কর্মিদের উপর নৃশংস হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আমাদের নেতা আ জ ম নাছির ভাইকে এ বিষয়ে অবহিত করবো এবং এমন ন্যাক্কারজনক হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চবি’র মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. টিপু সুলতান জানান, রাতে আঘাতপ্রাপ্ত ১১ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চবি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, অপহরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় । পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।