০৯ মে ২০২৫, ১০:৫৫

স্বামীসহ চার স্বজন হারানোর দিনই সন্তানের মা হলেন রোজিনা

সড়ক দুর্ঘটনার পর নিহতদের স্বজনের আহাজারি  © টিডিসি ফটো

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের একই পরিবারের ৪ জন নিহত হলেও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হাফেজ বিল্লাল ফকিরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা বেগম। তাকেই অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে পরিবারের লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। স্বামীসহ পরিবারের চারজনকে হারানোর কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সিজারের মাধ্যমে রোজিনা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গেলে এ তথ্য জানান স্বজন ও স্থানীয়রা। একই পরিবারের নিহত চারজন হলেন, সদর উপজেলার মিঠাপুর গ্রামের মাওলানা সামাদ ফকির, তার ছেলে হাফেজ বিল্লাল ফকির, স্ত্রী সাহেদা বেগম ও মেয়ে আফসানা আক্তার। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় রোজিনা বেগমকে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এর আগে দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুর এলাকা থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন ১০ জন। পথিমধ্যে সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চাকা বিকল হয়ে যায়। এরপর মহাসড়কের পাশে থেমে অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা মেরামত করা হচ্ছিল। এ সময় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দেয় এবং দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন পরে হাসপাতালে অন্যরা মারা যান। তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা বেগমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন হাফেজ বিল্লাল ফকির ও তার পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নিমতলা তালুকদার পাম্পের সামনে এলে তাদেরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটির সামনের চাকা ফেটে যায়। এ সময় মেরামত করার জন্য রাস্তার পাশে গাড়িটি থামিয়ে রাখা হয়। 

চাকা পাল্টানোর সময় পেছন দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে একই পরিবারের চারজনসহ ৫ জন মারা যান। 

আরো পড়ুন: ১২ বছর আগে গুম হওয়া সুমনের বাড়িতে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা নিয়ে পুলিশ

স্থানীয়রা জানায়, নিহত মাওলানা সামাদ ফকির ও তার ছেলে হাফেজ বিল্লাল ফকির দুজনই ছিলেন দুটি মসজিদের ইমাম। নিহত বিল্লালের স্ত্রী রোজিনা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন পরিবার। এ সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

সাবেক ইউপি সদস্য শারাফ উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একই পরিবারের চারজন রয়েছে। দ্রুতগতির একটি বেপরোয়া বাস অ্যাম্বুলেন্সকে পেছন থেকে চাপা দেয়। এতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বাসচালকের শাস্তি চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ নিহতদের পরিবারকে যেন অর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিহতদের পরিবার আবেদন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।