আবরার হত্যা মামলায় বহাল রইল ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৩১ পৃষ্ঠার এই রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি গত মাসের শেষ দিকে পেয়েছেন বলে আজ শনিবার (৩ মে) জানিয়েছেন আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
হত্যাকাণ্ডের সময় ও ঘটনায় জড়িত সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে ‘পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা’ করার অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে।
এই রায় অনুমোদনের জন্য ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত নথি) দাখিল করা হয়। একইসঙ্গে আসামিরা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করেন। এসবের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ১৬ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ২০ আসামির সবাই বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তিনজন পলাতক – মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। এছাড়া, মুনতাসির আল (জেমি) নামে আরও একজন গত বছর ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যান বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা পাঁচ আসামির নাম: মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা এবং ইশতিয়াক আহমেদ।
এই মামলার রায় হাইকোর্টে বহাল থাকায় আইনগতভাবে পরবর্তী ধাপ হবে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ শেষ হলো, যা ভবিষ্যতে শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা প্রতিরোধে নজির স্থাপন করবে।