পথচারী পারাপারে সব জেব্রা ক্রসিংয়ে বসবে ‘সিগন্যাল লাইট’
রাজধানীতে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে ধাপে ধাপে সিগন্যাল লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই আধুনিক সিস্টেমটি শুধু পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না বরং যান চলাচলের শৃঙ্খলাও ফিরিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) মিরপুর-২ নম্বরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের বিপরীতে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি)’-এর আওতায় পরিচালিত একটি পাইলট প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, বর্তমানে রাজধানীর ২২টি পয়েন্টে এমন সিগন্যাল লাইট বসানোর কাজ করছে ডিএমপি ও সিটি করপোরেশন। ফার্মগেট, সোনারগাঁও ক্রসিং, বাংলামোটর ও শেরাটন ক্রসিংয়ে শিগগিরই সিগন্যাল চালু হবে।
অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, আমরা ডিএমপি ও সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ঢাকা শহরের প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে ধাপে ধাপে এই ধরনের সিগন্যাল লাইট চালু করব। পথচারীরা যেন নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটা প্রজেক্ট আছে সেই প্রজেক্টে ফান্ডিং করছে জাইকা। জাইকার সহায়তায় এই প্রজেক্ট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করলেও এটাকে স্থায়ী করে ফেলব বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, পথচারী পারাপারের জন্য সিগন্যাল লাইট সিস্টেম চালু করেছি। গত ২০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক কার্যক্রম আগামী ৮মে পর্যন্ত প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলবে। আমাদের রিসোর্স আমরা ম্যানেজ করতে পারলে এটাসহ আরও অনেক জায়গায় এই ধরনের পথচারী পারাপারের জন্য সিগন্যাল লাইট প্রজেক্ট চালু করব।
তিনি বলেন, সাধারণত সড়কের দুই পাশ দিয়ে যদি এক মিনিটে ২০০ গাড়ি পারাপার হয়, তাহলে এই গাড়ি চলন্ত অবস্থায় একজন বা দুইজন পথচারী পারাপার হলে তাতে গাড়ির ফ্লো বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমরা পথচারীদের ফুটপাতে কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখব। যখন পথচারীদের জন্য সিগন্যাল লাইট অন হবে তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন পথচারীরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাস্তা পার হয়ে যাবেন। এরপর আবার গাড়ি চলাচল শুরু হবে। এর ফলে আমাদের ঢাকার রোড সেফটি যে প্রজেক্ট সেই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে। একদিকে পথচারীরা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচবে, অপরদিকে আমাদের গাড়ি চলাচল অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রজেক্টের ফলে গাড়িও সঠিক গতিতে সঠিক সময়ে চলতে পারবে। একটু অপেক্ষা করতে হলেও পথচারীরাও নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারবেন।
নগরবাসীকে সিগন্যাল লাইট মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ঢাকাবাসী এই সিগন্যাল লাইট মেনে চললে সবার সুবিধা হবে। সবাই তাড়াতাড়ি যেতে পারবে। আমরা ডিএমপি এবং সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ঢাকা শহরে এই ধরনের যত জেব্রা ক্রসিং আছে, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারীদের জন্য এমন সিগন্যাল লাইট সিস্টেম চালু করব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, আমরাই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যারা অ্যাসাইনে আছি, বিভিন্ন সংস্থা আছে তারা ঢাকার সিগন্যাল লাইটগুলো স্থাপনের জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের ২২টা সিগন্যালে দুই সিটি করপোরেশন বুয়েটের সহায়তায় সিগন্যাল লাইট বসাচ্ছে। সেগুলোতেও গাড়ি চলাচলের সিগন্যাল লাইটের পাশাপাশি পথচারীদের জন্য চলাচলের সিগন্যাল লাইটও থাকবে।
পরিদর্শনকালে ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার গৌতম কুমার বিশ্বাসসহ ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের কর্মকর্তারা ও জাইকার প্রতিনিধি দল এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।