প্রেম, পালিয়ে বিয়ে, অতঃপর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা
প্রথমে প্রেম, তারপর পালিয়ে বিয়ে। বিয়ের তিন মাসের পরে যৌতুকের দাবীতে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয় জাকিয়া সুলতানা জুঁই(১৭) নামের এক নববধুকে। এ ঘটনার পরপরই জাকিয়ার স্বামী মাসায়েক রানা জনি (২৫) কে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও অপর আসামী হাসিনা আক্তারকে (৩২) গ্রেফতার করছেন না পুলিশ। এমন অভিযোগ করছেন নিহতের চাচা রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের কাবিলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য তাহমিদুর রহমান ।
তাহমিদুর রহমান বলেন, তার বড় ভাই মালেশিয়া প্রবাসী জাহিদুল ইসলামের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা জুঁই’র সাথে প্রেম-ভালবাসা করে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে বিয়ে করেন পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা গ্রামের ছামিউল ইসলামের ছেলে মাসায়েক রানা জনি।
বিয়ের পর থেকে মাসায়েক রানা জনি তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের নীম বাগান গ্রামের জনৈক মালেক মিয়ার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। ওই বাসায় থাকার সময় মাসায়েক রানা জনি ও তার পরিবারের লোকজন জাকিয়া সুলতানা জুঁই’র কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা যৌতুক দাবী করে এবং দাবীকৃত যৌতুকের অর্থ তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে বলে। যৌতুক দাবীর বিরোধীতা করলে গত বছরের ৯ জুন মাসায়েক রানা জনি ও তার পিতা ছামিউল ইসলাম, ফুফু হাছিনা বেগম ও জ্যাঠা শামসুল আলম শারীরিক নির্যাতন শেষে শ্বাসরোধ করে জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে হত্যা করে। পরে তারা হত্যাকান্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মৃতের লাশ শয়ন ঘরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে।
তিনি আরও বলেন, ভাতিজি’র হত্যার সংবাদ পেয়ে তিনি দ্রুত কুড়িগ্রাম সদর থানায় গিয়ে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগ আমলে না নিয়ে এ-ঘটনায় একটি ইউডি মামলা রুজু করেন। যার কুড়িগ্রাম সদর থানার অপমৃত্যু মামলা নং-১৬, তারিখ- ০৯/০৬/২০১৮ইং।
ইউপি সদস্য তাহমিদুর রহমান বলেন, তিনি ভাতিজি হত্যার বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে কুড়িগ্রাম চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মিছ পিটিশন মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুড়িগ্রাম সদর থানায় প্রেরন করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার তদন্ত করে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তিনি বলেন, এভাবে হত্যাকান্ডের বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা চালাতে থাকাকালে জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে মর্মে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পায় কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কুড়িগ্রাম সদর থানার এসআই নাজমুল সজিব গৃহবধূ জাকিয়া সুলতানা জুঁই-এর স্বামী মাসায়েক রানা জনিকে আটক করেন এবং মাসায়েক রানা জনিকে বিজ্ঞ আদালত থেকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসেন। রিমান্ডের নিয়ে আসার পর ওই পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করে জেল হাজতে পাঠায়।
ইউপি সদস্য তাহমিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের আচরনে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারে সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কুড়িগ্রাম সদর থানার এসআই সজিব মিয়া বলেন, তিনি মামলার তদন্ত কাজে কোন গড়িমসি করছেন না। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন সাপেক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।