২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০৩

ছেলের ফলাফল জালিয়াতির ঘটনায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাবার বিরুদ্ধে মামলা

অভিযুক্ত বাবা নারায়ন চন্দ্র নাথ  © সংগৃহীত

এইচএসসি পরীক্ষায় নিজ ছেলের ফলাফল জালিয়াতি করেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নগরের পাঁচলাইশ থানায় ফৌজদারি মামলা করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. এ. কে.এম. সামছু উদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ (৫৬) ও তার ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ (২০), শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান (৬১) এবং সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার (৬১)।

নারায়ণ চন্দ্র নাথ বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ছিলেন। 

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ফলাফল প্রকাশের আগে যে কোনোসময় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি করে নক্ষত্র দেবনাথের ফলাফল পরিবর্তন করেন। নক্ষত্র ছাড়া বাকি তিনজন জালিয়াতি সংঘটনের সময় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে স্ব স্ব পদে দায়িত্বরত ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৩৪ ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পান নক্ষত্র। তবে বাংলায় এ পেলেও অতিরিক্ত বিষয়ের পয়েন্ট যুক্ত হওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে তিনি জিপিএ-৫ পান।

বাংলা বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে নক্ষত্রের পরিবারের লোকজন দেখেন আগে থেকে অনলাইনে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য কে বা কারা আবেদন করে দিয়েছেন। তাও শুধুমাত্র একটি বিষয়ে নয়, ১২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন। 

এর ফলে বিতর্ক আরও জোরালো হয়। এ অবস্থায় গত বছর জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

মাউশি’র শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তদন্তে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য নারায়ণের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া ও নক্ষত্রের ফলাফল বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।