আজহারীর মাহফিলে স্বর্ণালংকার-মোবাইল খোয়া, থানায় তিন শতাধিক জিডি
- যশোর জেলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৯ PM , আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৯ PM
যশোরের পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। শুক্রবার রাতে শহরতলি পুলেরহাটসহ আশপাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করেছেন। থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে। জিডির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন রাতে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তাদের আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়। এদিন সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক-মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ জন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য দেন। রাতে মাহফিলে পদদলিত হয়ে অসংখ্যা মানুষ আহত হন। এ ছাড়া মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, শুক্রবার রাতে মাহফিলে পদদলিত হয়ে ২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ওই রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে। জিডির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মায়ের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ায় শুক্রবার দুপুরে থানায় জিডি করতে এসেছেন সদরের রূপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। একপর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তাঁর গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছেন।
বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলি নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরির ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিন দিনব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লক্ষ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভেতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১ জানুয়ারি (বুধবার) থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারী) দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হামজা। শেষ দিন শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।