১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:১৫

‘অনিশ্চিত ভবিষ্যত’ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ৪০তম বিসিএসের ২৫ এএসপি

বাংলাদেশ পুলিশ  © সংগৃহীত

৪০তম বিসিএস ক্যাডারের সদস্যদের পাসিং আউট না দিয়ে উল্টো ২৫জনকে শোকজ দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি  হয়েছে। ‘প্যারেডে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হাঁটা’র অভিযোগ এনে গত ১৫  ডিসেম্বর ওই শোকজ দেয় প্রশাসন। এতে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগেই ওই নোটিশের জবাব আদায়ে বাধ্য করে প্রশাসন। বিষয়গুলো নিয়ে সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আনসার উদ্দিন খান পাঠান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অন্যায্য ও হতাশাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। আনসার উদ্দিন খান পাঠান এক সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং ফেনী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরও পড়ুন: প্রশিক্ষণে ‘দৌড় না দেওয়া’র অভিযোগে ২৫ এএসপিকে শোকজ, বাদ পড়ার শঙ্কা

তিনি লিখেছেন,  বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি , সারদায়  ৪০তম বিসিএস ক্যাডারের ৬৬জন এএসপি ১ বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে প্রায় মাস তিনেক আগে। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তাদের পাসিং আউট ইভেন্ট স্থগিত করা হয়। সেই থেকে তারা একাডেমিতেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ডরমিটরিতে দিন কাটাচ্ছে। এখন হঠাৎ করে , দিন দুয়েক আগে তাদের মধ্যে ২৫ জনকে প্রশিক্ষণ কালে মাঠের দৌড়ে পিছনে পড়া এবং ক্লাসে বিলম্বে আসার মত হাস্যকর কারণে শোকজ করা হয়। তাদের পরিণতি সহজে অনুমেয়। 

এর আগে ৭৯৮ জন সাব ইন্সপেক্টর ক্যাডেট এক বছর প্রশিক্ষণ শেষ করার পর তুচ্ছ কারণে ৩ শতাধিক ক্যাডেটের চাকরি গেছে। চাকরি যাবার মূল কারণটাও সহজে অনুমেয়। বাকিরা প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করেও এখন অজ্ঞাত কারণে একাডেমিতে বসে আছে, তাদের ভবিষ্যতও স্পষ্ট নয়। 

সারদাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ৩৫৪৯জন (মহিলা ৪৮৭ জন)  ট্রেইনি রিক্রুট কনষ্টবলের ৬ মাস প্রশিক্ষণ শেষে আজ ১৯ ডিসেম্বর পাসিং আউটের তারিখ নির্ধারিত ছিল যা হঠাৎ  স্থগিত করা হয়। কেউ জানে না এদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর পূর্বের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগে এদের জীবন দুর্বিষহ করার মত পদক্ষেপ কি না নিলেই নয়? প্রায় ১২ বছর সারদায় চাকরি করে অবসরে গেছি, অবসরের পরেও বিশেষ আমন্ত্রণে অফিসারদের গুটিকয় ক্লাস নিতে গেছি।  এদের মনের যাতনাটা আমি অনুভব করছি। 

‘একই সঙ্গে, একই মানদণ্ডে যোগদান করে প্রজাতন্ত্রের অন্যসব চাকরি করা যাবে, শুধু পুলিশেরটাই করা যাবে না, সেটি কোন যুক্তির কথা নয়।’ 

তিনি লিখেন, এটা ঠিক যে আওয়ামী লীগ ভিন্ন অন্য কোন দলের সাথে ন্যুনতম সংশ্লিষ্টতা ছিল এমন কাউকে পুলিশে বা সরকারি চাকুরিতে নেয়া হয়নি। তবু আমি মনে করি এই অল্প বয়সের সদ্য যোগ দেয়া পুলিশ সদস্যদের নতুন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় আদর্শে গড়ে তোলার সুযোগ আছে। এরা আগামী প্রায় তিন দশক চাকরি করবে, সুষ্টু রাজনৈতিক পরিমন্ডলে অপেশাদার আচরণের কোন সুযোগ তাদের থাকবে না। এরা বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় কোন থ্রেট  হবে বলে আমি মনে করি না। শুদ্ধি অভিযানের জন্য এদের টার্গেট করার যৌক্তিকতা তেমন দেখছি না।

পুলিশে যদি সত্যিকারের শুদ্ধি অভিযান চালাতে চান তবে বিগত ১৫ বছর ধরে যারা গুম, খুন, নির্যাতন, গায়েবী মামলা, সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, দিনের ভোট রাতেই সেরে ফেলেছেন তাদের পাকড়াও করুন। আগস্ট বিপ্লব দমনের নামে যারা নির্বিচার গুলি করেছেন, বিরোধী দলের রাজনৈতিক অফিস ভেঙেছেন, নিজের সরকারি অফিসকে রাজনৈতিক অফিস বানিয়েছেন, ফিল্ম স্টারদে মত নিজেদের পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হয়েছেন,  সুপার কপের তকমা নিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করুন। তাদের ছেঁটে ফেলুন। তাতে করে বিদ্যমান বাহিনী যেমন শুদ্ধ হবে নবীনরাও আর সে পথে পা দেয়ার সাহস পাবে না। 

আনসার উদ্দিন খান পাঠান আরও লিখেন, হাসিনার ৩টি ভুয়া নির্বাচনের মধ্যে ২০১৮ সনেরটি ছিল ভয়াবহতম। এক কথায় জঘন্য। বিরোধী প্রার্থী এবং কর্মীদের ভুয়া মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি, আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারার দায়িত্বও আগ বাড়িয়ে নিয়ে নিয়েছে কতিপয় উৎসাহী পুলিশ। নির্বাচন কমিশন আর রিটার্নিং অফিসাররা ভুয়া ফলাফল সীট প্রকাশ করে, প্রিসাইডিং আর পোলিং অফিসাররা ফাঁকা ব্যালটে স্বাক্ষর করে আর পুলিশের উৎসাহীরা তাতে সিল মারে।বিনিময়ে একদিকে যেমন নিজ নিজ চেয়ার রক্ষা হয় অন্যদিকে তেমনি  নানানভাবে হন পুরস্কৃত। প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি আর পুলিশ/র‍্যাবের সুপার কপগণ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ পান। কেন্দ্রে নিয়োজিত প্রতি কষ্টবল টিএ-ডিএ-র বাইরে বিশ হাজার টাকা করে উপঢৌকন পান, উপরের জনেরা কত পেতে পারেন, তা অনুমান করা যায়। পুলিশের সুপার কপরা বিমান আর হেলিকপ্টারে প্রতি জেলায় জেলায় সফর করে ভোট কাটা নিশ্চিত করেন। সেই লক্ষ্যে পুলিশের তৎকালীন আইজিপি বিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে বিভাগ ভিত্তিক তদারকি টিম করে দেন। এই অপকর্মে যে অফিসার ও ফোর্স সহযোগিতা করবেন না বলে সন্দেহ করা হয় তাদের  সবরকম নির্বাচনী দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়।

‘এই বিপুল সংখ্যক তরুণ যারা বাদ পড়তে যাচ্ছে তাদের সবারই দীর্ঘ ও সফল প্রশিক্ষণ শেষে হালকা থেকে মাঝারী অস্ত্র চালানো, আত্মরক্ষার কৌশল, শত্রুকে সহজে ঘায়েল করা, আইনের ফাকফোকর ইত্যাদি বিষয়ে সামর্থ্য অর্জিত হয়েছে। তারা কেউই প্রশিক্ষণ জমা রেখে যাবে না। অনূকূল পরিবেশে তাদের ভীতিকর কোন বোঝা হয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়ে যাবে।’

শুধু তাই নয়, এই জঘন্য নির্বাচনে 'প্রশংসনীয়' দায়িত্ব পালনের জন্য ৩৫০ জন অফিসারকে বিপিএম , পিপিএম পদক পরিয়ে দেন হাসিনা। এই পদকের সাথে দেয়া হয় যথাক্রমে ১ লাখ ও ৭৫ হাজার টাকা এবং আজীবন প্রতি মাসে এক হাজার টাকা। বিগত ১৫ বছর দরকার নেই, শুধুমাত্র ২০১৮ এর নির্বাচনকালে যারা এই বিতর্কিত কম্ম করেছেন তাদের কাগজ দেখে চিহ্নিত করে বাড়ি পাঠিয়ে দিন। যারা অবসরে গেছেন তাদের ধরে এনে শাস্তি দিন। বাহিনী মিনারেল ওয়াটারের মত পরিস্কার হয়ে যাবে।

একই সঙ্গে, একই মানদণ্ডে যোগদান করে প্রজাতন্ত্রের অন্যসব চাকরি করা যাবে, শুধু পুলিশেরটাই করা যাবে না, সেটি কোন যুক্তির কথা নয়। এই বিপুল সংখ্যক তরুণ যারা বাদ পড়তে যাচ্ছে তাদের সবারই দীর্ঘ ও সফল প্রশিক্ষণ শেষে হালকা থেকে মাঝারী অস্ত্র চালানো, আত্মরক্ষার কৌশল, শত্রুকে সহজে ঘায়েল করা, আইনের ফাকফোকর ইত্যাদি বিষয়ে সামর্থ্য অর্জিত হয়েছে। তারা কেউই প্রশিক্ষণ জমা রেখে যাবে না। অনূকূল পরিবেশে তাদের ভীতিকর কোন বোঝা হয়ে পড়ারও ঝুঁকি রয়ে যাবে।