গুমের পর মাথায় গুলি করে হত্যা, লাশ ফেলা হতো নদীতে
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রকাশিত হয়েছে গুমের পেছনের ভয়ংকর বাস্তবতা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের হত্যা ও নিখোঁজ করার নৃশংস পদ্ধতি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্টতা, এবং পরিকল্পিতভাবে এসব অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার বিভিন্ন কৌশল উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রতিবেদনটির কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়, যেখানে উঠে এসেছে গুম ও হত্যার পদ্ধতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিশন ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, আবার অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে গুমের পর হত্যার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু ভয়াবহ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মাথায় গুলি করার পর মরদেহ সিমেন্টের বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। বুড়িগঙ্গা নদী, শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চন সেতু এবং পোস্তগোলা সেতুর কাছাকাছি এলাকাগুলোকে উপযুক্ত হত্যাস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুন্দরবনের জলদস্যুদের কাছ থেকে জব্দ করা একটি নৌকা পোস্তগোলা সেতুর কাছে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা, র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ কমিশনের
প্রতিবেদনে র্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান এবং ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এক ব্যাটালিয়ন কমান্ডার বলেছেন, র্যাবের গোয়েন্দা প্রধানের তত্ত্বাবধানে একটি সেশনে সেতুর ওপর দুজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। আরেক সৈনিকের বরাতে বলা হয়, এক ভুক্তভোগী পালানোর চেষ্টা করলে তাকে পুনরায় ধরে এনে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর গুম এবং হত্যার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে, যেখানে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও মুক্তির বিস্তারিত বিবরণ থাকবে।
গুম নিয়ে এই ভয়াবহ তথ্য প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের তথ্যগুলো জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।