ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুধবার সংঘর্ষ হয়
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুধবার সংঘর্ষ হয়  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর সাইন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় নানান ধরনের মত পাওয়া গেছে। বুধবারের (২১ নভেম্বর) এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থী আহত হন। এদিন বেলা আড়াইটায় সাইন্সল্যাব মোড় সংলগ্ন সিটি কলেজের সামনে ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের পর এ সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে এর আগে সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে নানান মতামত পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সকালে সম্ভবত ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারি হয়। এরপর বেলা আড়াইটায় নিয়মিত রুটিনে ঢাকা কলেজের বাসগুলো ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়। এরপর সিটি কলেজের কাছে মোহাম্মদপুরগামী পদ্মনীল বাস ও উত্তরাগামী বিজয়-৭১ বাসে সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভাঙচুর করে। এরপর সংঘর্ষ শুরু হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া স্ট্যাটাস অনুযায়ী সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, ‘১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) আমি ও আমার দুই বন্ধু সাইন্সল্যাব থেকে ঢাকা কলেজের সামনে দিয়ে নিউমার্কেট যাচ্ছিলাম। তখন ঢাকা কলেজের বাস নিউমার্কেট সামনে যে মোড় (নীলক্ষেত), সেই মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরে তারা কি যেন একটা বলছে। আমরা ভাবছি, আমাদের কি বলবে? পেছনে ঢাকা কলেজের স্টুডেন্ট ছিল, হয়ত ওদেরকে বলতেছে। এরপর গাড়ি থেকে ১৫-২০ জন স্টুডেন্ট বের হয়েছে। তারা আমাদের দিকে দৌড়ে আসতে থাকে, তখন আমরা বুঝিনি। ভাবছি পেছনে কোন ঝামেলা হয়েছে।’

তখনও তারা সামনের দিকে যাচ্ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ তারা কিছু না বুঝে আমাদের ওপর অ্যাটাক করে। পরে আমাদের অনেকক্ষণ মারছে। আমার যে আইডি ছিল, সেটা নিয়ে গেছে। আমার পকেট ছিড়ে নিয়ে গেছে। পরে যাওয়ার সময় আমাদের তিন-চারটা লাথি দিয়ে চলে গেছে। হঠাৎ করে আমাদের গায়ে কেন হাত তুলল, এটার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। ঢাকা কলেজের পদ্মনীল বাস থেকে হামলা করা হয়।’

ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ বলেন, ‘আমরা কোচিং করে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা হলো। পদ্মনীল, শঙ্খচিল এবং বিজয়-৭১ বাস যাচ্ছিল সাইন্সল্যাব দিয়ে। ওরা ছয়জন এসেছিল। সিটি কলেজের ড্রেস পরা ছিল, কিন্তু আইডি কার্ড ছিল না। ছয়জন এসে আমাদের বলছে, ‘এই তুমি কোন কলেজ, ঢাকা কলেজ? বলে যে, তোমার এ ড্রেস রাখার দরকার নেই। এরপর পকেটে হাত দিয়ে টেনে ছিড়ে ফেলে। এরপর আমি বড় ভাইদের যে গাড়ি যাচ্ছিল, সেই গাড়ির সামনে গিয়ে বললাম, ভাই দেখেন আমাদেরকে মারছে ওরা। ভাইয়েরা আসার সাথে সাথেই ওরা পালিয়ে গেল।’

আরো পড়ুন: হামলায় জড়িত সেনাবাহিনী-পুলিশও, ঢাকা কলেজের দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী আহত

‘তারপর বাস দুইটা ওদিকে (মিরপুর রোড) এবং এদিকে (মোহাম্মদপুর) যাওয়া শুরু করলো। এরপর সিটি কলেজের পোলাপান বাস ভাঙচুর করা শুরু করল। আমাদের মনে হয় আগে থেকে প্ল্যান করে বাসে হামলা চালিয়েছে’, যোগ করেন তিনি। ভুক্তভোগী (তাওহীদ) শিক্ষার্থীর মা নিশ্চিত করেন, সিটি কলেজের ছয়জন শিক্ষার্থী আইডি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা সিটি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক নিয়ামুল হক বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল আমাদের এক শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজের ছাত্রকে মেরেছিল। সেটা আমরা জানতাম না। পরে ঢাকা কলেজের ছেলেকে আমরা উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিই। এরপরই আজকের মূল ঘটনা। এতে সিটি কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড় সংলগ্ন ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত একমাসে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্তত চারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ