শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মিছিল থামাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট  © ফাইল ফটো

স্কুল শিক্ষকের কাছে বাবা অপমানিত হয়েছেন। একমাত্র তার কারণেই বাবাকে মাথা নত করতে হয়েছে। এই অপরাধবোধ থেকেই হয়তো বাবার কাছ থেকে চিরতরে মুখ লুকিয়ে নিয়েছেন অরিত্রি অধিকারী।বলতে চেয়েছেন সামান্য ক্ষমাই তো চেয়েছিলেন বাবা। আর কিছুতো চাননি। ভিকারুননিসার শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর এভাবে চলে যাওয়াকে হৃদয় বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এই আত্মহত্যার ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সম্প্রতি অরিত্রির মতো আত্মহত্যার মিছিলে সামিল হওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের এমন আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের আদেশও দেয়া হয়েছে এই কমিটিকে।  আজ মঙ্গলবার গঠন করা এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী বিগত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আদালতের নজরে আনার পর আদালত এ আদেশ দেন। এই চার আইনজীবী হলেন- ব্যারিস্টার অনীক আর হক, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, জেসমিন সুলতানা।

জারিকৃত আদেশ অনুযায়ী- পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের নিচে নয় এমন একজন প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, মনোবিদ ও আইনবিদকে নিয়ে হবে।

আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, “এক মাসের মধ্যে এই কমিটিকে দুটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। একটি হচ্ছে- জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে তারা একটি প্রতিবেদন দেবে। আরেকটি হচ্ছে- অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালত সরকারের প্রতি রুলও জারি করেছেন।”

অরিত্রীর আত্মহত্যার মত ঘটনা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয় করে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।  সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান এ আইনজীবী।

বাবাকে অপমান করায় আত্মহত্যা করেছে অরিত্রি অধিকারী

 

অন্যদিকে, আজ বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ভিকারুননেসার শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনাকে হৃদয় বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন। এর আগে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। শুনানিকালে তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমরা  এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।’

এ সময় আদালত ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হককে  উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট দায়ের করেন। আমরা বিষয়টি দেখবো।’

প্রসঙ্গত, রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর কাছ থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মোবাইল পাওয়া যায়। এতে নকলের অভিযোগ এনে তাকে পরীক্ষায় হল থেকে বের করে দেয়া হয়। পরদিন পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়নি। কথা বলার  জন্য তার বাবা-মাকে স্কুলে নিয়ে আসতে বলা হয়। গতকাল সোমবার অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ের নকল করার ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি। পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।

এই আত্নহত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।  শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্কুলটির প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাত আরাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।  এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসেরও অপসারন দাবি করেছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।  ঘটনার তদন্তে স্কুল কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।  কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিদেবদন জমা দিয়ে বলা হয়েছে। 

 


সর্বশেষ সংবাদ