আইফোন চুরি করতে গিয়ে মা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকার একটি বাড়িতে মা-ছেলেকে হত্যার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় হত্যার সঙ্গে জড়িত ১৭ বছরের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় পুলিশ তার নাম প্রকাশ করেনি। ঢাকার সাভার থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে তাঁকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১২টায় সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন খান।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় গৃহকর্মী এসে ঘরের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- ফরিদা বেগম (৪৫) ও তাঁর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম (২০)। ফরিদা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর মেয়ে লন্ডনে থাকেন। ছেলে মিনহাজুল ইসলামকে নিয়ে সুনামগঞ্জে থাকেন তিনি।
পুলিশ সুপার জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী নিহত মিনহাজের আত্মীয়। সে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী তার মা ও বড় ভাইসহ ওই বাড়িতে থাকে। বড় ভাই ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে আসেন তিনি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তার এক বন্ধুকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থী ও তার বন্ধু গত এক সপ্তাহ আগে থেকেই মিনহাজের ব্যবহৃত আইফোন ১১ মডেলটি চুরি করার পরিকল্পনা করে। মোবাইলসহ সোনা, গহনা চুরি করে পার্টি করার পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু বাসায় মেহমান ও গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রের বড় ভাই বাড়িতে থাকায় মোবাইল চুরি করতে পারেনি তারা। তার বড় ভাই ঢাকায় চলে গেলে ২৯ অক্টোবর রাতে বন্ধুকে বাসায় ডেকে আনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী।
মিনহাজ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় তার মোবাইল চুরি করে ওই দুজন। এ সময় মিনহাজ ঘুম থেকে উঠে গেলে ওই শিক্ষার্থী তাকে বটি দিয়ে দুটি কোপ দেয়। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মিনহাজুল। এর একটু পরে মিনহাজের মা জেগে উঠলে তাঁকেও বটি দিয়ে আঘাত করলে দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর মা ঘটনা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
গত মঙ্গলবার ভোরে সদর হাসপাতাল রোডের নিজ বাসায় খুন হন ফরিদা বেগম ও তাঁর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম। খুনের পর থেকে ওই বাসায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও তার বড় ভাই না ছিল না। এদিকে এ ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অভিযুক্তের মা।
পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘মাদ্রাসা পড়ুয়া নিহত মিনহাজের ওই আত্মীয় আমরা আমাদের হেফাজতে নিয়ে এসেছি। আমরা তার বন্ধুকেও হেফাজতে দ্রুত আনার চেষ্টা করছি।’
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আজ নিহত ফরিদা বেগমের মেয়ে লন্ডন থেকে আজ দেশে এসেছেন। তিনি থানায় এসেছিলেন। এ নিয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।