০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১

সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফনান

সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফনান
লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রীজের ওপর গুলিবিদ্ধ হযে মারা যান সাদ আল আফনান  © বাসস

প্রাইভেট পড়া শেষ করে দেন সাদ আল আফনান (২২) বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে যুবলীগ। গুলি চালানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে আফনান গুলিবিদ্ধ হন। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি আফনান।

ঘটনাটি ঘটে লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রীজের ওপর। সবার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তার সহপাঠী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এরপর বাড়ি আর ফেরা হয়নি তার। বিষয়টি মানতে পারছে না আফনানের মা নাছিমা আক্তারও। স্বামীকে হারানোর পর পর হারালেন ছেলেকেও। তার এখন দিন কাটে আর্তনাদে। 

আফনানের মা নাছিমা আক্তার বলেন, তিন মাস আগে স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা যান। সে শোক সইতে না সইতে একমাত্র ছেলেকে হারালাম। এখন আর আমার কেউ রইল না। সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। মামলা করেও ভয়ে আছি। আফনানের কথা ভুলতে পারি না। কি দোষ ছিল তার?

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের বরাতে বাসসের খবরে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট সারাদেশের মতো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল পুরো লক্ষ্মীপুর। মিছিলে মিছিলে মুখর ছিল পুরো শহর। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা উত্তর তেমুহানী থেকে একটি মিছিল নিয়ে ঝুমুর চত্ত্বরের দিকে যাচ্ছিল। মিছিল থেকে তারা আকস্মিক হামলা চালানো শুরু করে। পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করে শিক্ষার্থীরা। 

এ সময় জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের অপসারনকৃত চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে মুহুর্মুহু গুলি ছোঁড়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ব্রীজের ওপর গুলিবিদ্ধ হয় আফনান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। এর জেরে ফুসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে এগোতো থাকেন তারা। তমিজ মার্কেট এলাকায় পৌঁছালে নিজ বাসভবনের ছাদ থেকে প্রকাশ্যে টিপু ও তার সহযোগিরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। 

এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী কাউছার উদ্দিন বিজয় ও তৌহিদ কবির রাফি এবং সাব্বির হোসেনসহ আরো তিনজন মারা যায়। তিন শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হন কমপক্ষে পাঁচশর বেশি শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর টিপু ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আলমের গুলি করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। আফনান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাস টার্মিনাল এলাকার সালেহ আহম্মদ ও নাছিমা আক্তারের ছেলে। লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

সাদ আল আফনান হত্যায় অপসারণ করা সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান করে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে নাছিমা আক্তার হত্যা মামলা করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের পধদারী নেতাদের নামও রয়েছে। আসামিরা আত্মগোপনে থেকে বাদী ও স্বজনদের ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এতে ভয়ে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আফনানের মা নাছিমা আক্তার। জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁর স্বজন ও সহপাঠীরা।

আরো পড়ুন: জয়কে অপহরণ-হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন মাহমুদুর রহমান

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন এ্যানী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে যেভাবে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে চার শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে, অসংখ্য শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে, এটি কোন সভ্য দেশে হতে পারে না। হত্যাকারীদের বিচার হবেই হবে। কোনভাবেই তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ফারুক হোসাইন নুরনবী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা যেভাবে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়েছে,ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে পাখির মতো ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা হয়েছে তা ভাবা যায় না।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।