যুবদল নেতার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতার অফিস ভাঙচুর
ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে সদর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফরহাদনগরের কেএম হাটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ছিঁড়ে ফেলা হয়।
জানা গেছে, যুবদল নেতা শাহাদাত বিকেলে ৪০-৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে বাজারে মহড়া দেন। পরে তাঁর উপস্থিতিতে সেখানকার রোকেয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় জিয়া উদ্দিনের কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন ফরহাদনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বাবলু, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মিলনসহ কয়েকজন। তাঁরা দেয়ালে টাঙানো জিয়া পরিবারের ছবি ছিঁড়ে ফেলেন এবং অফিসে থাকা প্রায় ৫০টি চেয়ার নিয়ে যান।
ফরহাদ নগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল কর্মী আজিজুল হক রিয়াদ বলেন, ঘটনার সময় আমি বাজারেই ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহাদাত হোসেন দলবল নিয়ে বাজারে শোডাউন দিতে থাকেন। স্লোগান দিতে দিতে তারা জিয়া ভাইর অফিসে উঠে ভাঙচুর শুরু করে। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছিঁড়ে ফেলে। খারাপ লাগলেও নিরাপত্তার কারণে তখন তাদের সামনে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ফরহাদ নগরে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে নিজের অনুসারীদের দিয়ে আমার হাতে গড়া শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন সদর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শাহাদাত হোসেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে ফরহাদ নগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বাবলু, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মিলন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, যুবদল কর্মী সুজন, চয়ন, নবী ও বাচ্চুসহ ৪০–৫০ জনের দল আমাদের ক্লাবে ভাঙচুর করেছে।
জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, হামলার সময় আমরা কেউ ছিলাম না। এ জন্য কেউ হতাহত হয়নি। বিষয়টি জেলা বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের সব শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শাহাদাত হোসেন বলেন, ক্লাব ভাঙচুরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। একজন বিএনপির রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। জিয়া উদ্দিনের সঙ্গেও আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই, সে আমার সন্তানতুল্য।
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি ফরহাদ নগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোশারফের সঙ্গে জিয়ার পূর্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনা জেনে আমি মোশারফকে ফোন করে বকাঝকা করেছি। সে বলেছে সে ভাঙচুর করেনি। জিয়া নাকি নিজেই ভাঙচুরের নাটক সাজিয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার যে সময় বলা হচ্ছে, তখন আমি সেখানে ছিলাম না। এরপরও আমি আমার সিনিয়র নেতাদের বিষয়টি অবগত করেছি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানিয়েছি।
ফরহাদ নগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মিলন বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে। আমি এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। শুনেছি কেএম হাট বাজারে জিয়ার অফিসে কয়েকজন ছেলে চেয়ার টেবিল ফেলে দিয়েছে। আমি আর বেশি কিছু জানি না।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফেনী জেলা যুবদলের সদস্যসচিব নাসির উদ্দিন খোন্দকার বলেন, ছাত্রদল নেতা জিয়াউদ্দিন আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে যার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ঘটনাটি নিয়ে জেলার সব শীর্ষ নেতারা অবগত হয়েছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামীকালের মধ্যে তারা একটা ব্যবস্থা নেবেন।