পুরোনো রূপে তেজগাঁওয়ের মেয়র আনিসুল হক সড়ক
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তেজগাঁও সাতরাস্তা হয়ে কারওয়ান বাজার রেলগেট সড়কটি তার বহু পুরোনো রূপে ফিরে গেছে। রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এ মেয়র আনিসুল হক সড়কে আইন শৃঙ্খলার অভাবে বহু মাত্রায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের দখলের কারণে। শুধু এ সড়কই নয়, গড়ির অবৈধ পার্কিং ছড়িয়ে পড়েছে তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিভিন্ন সড়কে।
বিগত ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা এই স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সড়কটি চওড়া এবং ফুটপাত সংস্কার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে করা হয়েছিলো অযান্ত্রিক বাহনের জন্য আলাদা লেন। ফলে সাতরাস্তা থেকে কারওয়ান বাজার বা ফার্মগেট যাওয়ার এই পথ হয়েছিল যানজটমুক্ত। তবে কিছুদিন পরপরই শুরু হতো পুনরায় দখল, প্রয়োজন পড়তো অভিযানের। বর্তমানে প্রশাসনের অভাবে আবারও জেঁকে বসেছে দখলদারিত্ব।
সরেজমিনে তেজগাঁওয়ের সদা ব্যস্ত সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সড়কের দুইপাশেই অর্ধেক জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ভারী যানবাহন পার্ক করে রাখা হয়েছে। চওড়া এই সড়কের সামান্য অংশ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সহজেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। প্রতিশ্রুতি দিয়েও অত্যাধুনিক টার্মিনাল তৈরি করে না দেওয়ায় এত গাড়ি রাস্তায় এসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চালকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘বিটিসিএলের একটা ল্যান্ড ট্রান্সফারের প্রক্রিয়াধীন আছে যেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের চেষ্টা করছি। এখানে তাদের থেকে আমরা প্রায় ১৬ বিঘা বা ৫ একরের মতো পাবো। আগে সিদ্ধান্ত হলেও চূড়ান্ত হয়নি এই কাজটি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন তাদের সাথে আবার যোগাযোগ স্থাপন করেছি। আমরা আশা করছি যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়ে আন্তরিক। আগে থেকেই যে-সকল পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সেগুলো আমরা রিভিউ করছি। যদি তা যথাযথ হয়ে থাকে তাহলে আমরা তা বাস্তবায়ন করা শুরু করবো। এ বিষয়ে বুয়েটের যারা নগর পরিকল্পনা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করেন তাদের সাথে আমরা আলোচনা করছি। আজকেও এ বিষয়ে আমাদের মিটিং ছিল। জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হলেই পরে ধাপে যেতে পারবো।’
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার স্নেহাশিস কুমার দাস বলেন, ‘সড়কের পাশে থাকা ট্রাক স্ট্যান্ডে ৫৭০টি গাড়ির জায়গা হয়। পুরো জায়গাটা নিয়ে চিন্তা করলে এখানে ২ ই২০০'র মতো গাড়ি থাকে প্রায়। আর প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৪০০০ গাড়ি এই কেন্দ্রিক মুভমেন্টে থাকে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা গাড়িগুলো সকালে ঢুকে পড়লে সারাদিনে আর শহর থেকে বের হতে পারে না, তখন এখানেই থেকে যায়। ঢাকা শহরের পেরিফেরিতে যত গাড়ির অবস্থান করার দরকার, সবাই এখানেই চলে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত আড়াই মাস আগে এই সড়কটা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। পূর্বের মালিক-চালক সমিতির নেতাকর্মীদের সাথে আমাদের যে কো-অর্ডিনেশন ছিল, এই পরিস্থিতিতে অনেকেই চলে যাওয়ায় নতুনদের সাথে সেই কাজটা সহজে হচ্ছে না। আমরা আজকে থেকেই কাজ শুরু করেছি। আশা করছি আগামী দশদিনের মধ্যেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
‘বড় ট্রাক টানার মতো আমাদের যে রেকারগুলো ছিল সেগুলো আন্দোলনের সময় পুড়ে যায়, আজকে আমরা একটি রেকার পেয়েছি। সেটা নিয়েই আমরা আজকে কাজ শুরু করেছি। এই সময়ে পুলিশের ইনফ্লুয়েন্স কমে যাওয়ার একটা সুযোগ ড্রাইভাররাও নিয়ে নিচ্ছেন।’
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বাজার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ট্রিপের সংখ্যা অনেক কম। এত দূর থেকে এসে গাড়িগুলা রাখারও আর জায়গা নাই। তাই সবাই এখানেই চলে আসে। জায়গার চেয়ে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। আর প্রশাসনের অবস্থাও এখন ভালো না, তারা কাজ করতে না পারায় আমাদের নেতাকর্মীরাই যথেষ্ট শ্রম দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছে। তারা যদি একটু কাজ শুরু করে চাপ দেয় তাহলেই কিন্তু রাস্তাটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যে চালকরা এইভাবে গাড়ি রাখে তাদেরও একটু বিবেক থাকা দরকার।’
দ্রুতই প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। পূর্বের সকল আশ্বাস যেন বাস্তবায়ন করে ট্রাকের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন টার্মিনাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিমার্ণ করেন এমনটাই চাওয়া মালিক ও চালকদের।