#মি টু যুগে বাংলাদেশ: ঢেউ আছড়ে পড়ছে প্রতিদিন

সর্বশেষ অভিযোগ করেন ঢাবির প্রাক্তন ছাত্রী তাহেরা তমা
সর্বশেষ অভিযোগ করেন ঢাবির প্রাক্তন ছাত্রী তাহেরা তমা  © সংগৃহীত

‘ক্ষমতা’ ধারণ করে রাষ্ট্র। তাতে পিছিয়ে থাকেন না তাবড় সব ব্যক্তিরাও। কিন্তু শব্দও যে ক্ষমতা ধারণ করতে পারে; ‘Me Too’-ই সম্ভবত তার বড় উদাহরণ। হালের দুনিয়ায় পাঁচ বর্ণে গড়া শব্দ দুটোই যে কতশত বেদনা, হেনস্থা আর কদাচ প্রাপ্তির সাক্ষ্য দিচ্ছে; সেটা সম্ভবত এশিয়া থেকে এন্টার্কটিকা— সব মহাদেশেরই সমান জানা।

শুরুটা হয়েছিল বিদেশের মাটিতে। ২০০৬ সালে। স্লোগান ছিল ‘তুমি একা নও, আমিও’। তবে আন্দোলনটি ‘মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা’ বলতে যা বুঝায়; সেটার শুরু ২০১৭-তেই। হলিউডের নামকরা প্রযোজক হার্ভি ওয়েইনস্টিনকে দিয়ে। জনপ্রিয় এ মিডিয়াম্যানের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী অ্যালিসা মিলানো যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে হইচই পড়ে যায় বিশ্ব সিনেমাজগতে। হলিউডে নারীদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে টুইটারে ব্যক্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ওই অভিনেত্রী লিখেন, ‘আপনিও যদি এমন যৌন নিগ্রহ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন কখনো, তবে এই টুইটের উত্তরে স্রেফ লিখুন মি-টু।’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার টুইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই লাখ নারী লেখেন মি-টু। মূলত এখান থেকেই চালু হয় ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’। যা একে একে জনপ্রিয় উপস্থাপক, কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক  প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়রের বিরুদ্ধে আঘাত হানে। সম্প্রতি এই ঢেউ উপমহাদেশকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশে আছড়ে পড়েছে।

একে একে অভিযোগ এসেছে ব্যবসায়ী রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক প্রণব সাহা, আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলাম, প্রায়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনসহ একাধিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও নাম না জানা অনেকের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে করা এসব অভিযোগ মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। যাতে পুরুষ কর্তৃক হেনস্থার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন নারীরা।

সর্বশেষ তাতে যোগ দিয়েছেন তাহেরা তমা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী। ধর্মীয় শিক্ষক ও বাবার বন্ধুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। হ্যাশট্যাগ মি টু-তে যৌন নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরেছেন ধর্মীয় শিক্ষককের ছেলে, খালাত ভাই ও তার বাবার বন্ধুর বিরুদ্ধে। ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র আল্লাহর গজবের উপর ভরসা করে মুখ মেরে রাখলে নিপীড়করা থামবে না। ডানে-বায়ে, ঘরে-বাইরে, ট্রেনে-বাসে ও কর্মস্থলে— যখন যেখানে যার হাতে নিপীড়নের শিকার হবে; তখনি মুখ খুলে চিৎকার করে বলতে হবে! মনে রাখতে হবে, কলঙ্কিত হলে নিপীড়ক ও তার পরিবার হবে.. ভিকটিম নয়!

বাংলাদেশে মি টু আন্দোলনে হলিউডের পাশাপাশি ভারতও প্রভাব ফেলে।

 

বাংলাদেশে ‘মি টু’ আন্দোলন মূলত আয়ারল্যান্ড প্রবাসী মডেল এবং অভিনেত্রী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তির মাধ্যমে। যা আজ প্রায় প্রতিনিয়তই চলছে। আসছে নতুন নতুন সব অভিযোগ। তথ্যমতে, গত ২৯শে অক্টোবর ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন প্রিয়তি। যদিও রফিকুল ইসলাম এই ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে প্রবাসী ওই বাংলাদেশীর স্ট্যাটাসের পরদিনই (৩০অক্টোবর) শুচিস্মিতা সীমন্তি নামে আরেক প্রবাসীর অভিযোগ আসে ডিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে। হ্যাশট্যাগ মি-টু লিখে তার সঙ্গে ১১ বছর আগের ঘটনা ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে থাকা এই নারী। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সীমন্তি জানান, ‘উনি ফ্যামিলি ফ্রেন্ড ছিলেন। উনি অনেক সময় আসতেন। আমি যখন পড়তাম আমার রুমে আসতেন এবং উনি যেভাবে টাচ করতেন— সেটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে অনেকবার এ ঘটনা হয়েছে আমার সাথে। এতবার হয়েছে যে, আমি হিসাবই করতে পারব না। চেষ্টা করেছি যাতে একস্ট্রিম  পর্যায়ে না যায়।’

অবশ্য প্রণব সাহাও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘এ অভিযোগের যেমন কোনো ভিত্তি নাই, তেমনি এটাকে ধরে আমাকে সামাজিক, মানসিক এবং পেশাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করাও সমীচীন নয়। আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও গ্রহণযোগ্য নয়।’

সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে শুচিস্মিতা সীমন্তির প্রতিবাদ

 

মূলত ওই দুই নারীর আনা যৌন হেনস্তার অভিযোগই বাংলাদেশে মি-টু আন্দোলনের সূচনা এনে দেয়। যাতে সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর যোগ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তাহেরা তমা। তিনি লিখেছেন, মা ক্যান্সারে মারা যাওয়ার কিছুদিন পর আমার বড় খালা একদিন আমাকে তার বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যায়। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি রাতে খালার পাশে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ আমি টের পাচ্ছি কে যেন আমার বুক হাতরাচ্ছে; মুখে, গলায় দাড়ি-গোফ দিয়ে খুচাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছি চোর। কিন্তু পাশেই থাকা বেডের সুইচ অন করতেই দেখি সে আমার বড় খালার ছোট ছেলে। ধীরপায়ে চলে যাচ্ছে পাশের রুমে। খালা তখন টয়েলেটে ছিল। ঘরে ফিরলে আমি হাউমাউ করে কান্নাকাটি করি। বলি, আমি এখনি বাড়ি যাব। এ ঘটনা শোনে খালা সেদিন আমাকে বলছে আমি নাকি দুঃস্বপ্ন দেখছি। তার ছেলে অতি সাধু ও মুমিন ব্যাক্তি। এরপর থেকে খালা এবং তার কুপুত্রকে নর্দমার কিটের মত ঘৃনা করি!

তমা আরো লিখেছেন, তখন আমার বয়স ৭। ক্লাস টু-এ পড়ি... মক্তবে পড়ার পাশাপাশি সহীহ আরবি শিক্ষার জন্য আমাদের গায়ের উত্তরপাড়ার ভালো আরবি জানা এক বয়স্ক হুজুরের কাছে প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করে দেয় আমার বাবা। উনাকে আমরা জেঠা বলে ডাকতাম, উনার নাম ফজুলহক। আমাদের ফ্যামিলির শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে একজন তিনি। খুব ভালো মানুষ। সে হিসেবেই ওনার কাছে বিকেলে প্রাইভেট পড়ছি আমি আর আমার বড় ভাইয়া...।

একদিন সেই হুজুরের এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় তিনি দুই দিনের জন্য অনুপস্থিত থাকেন। এ সময় তার টিচিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে যান তার ছেলের কাছে। যার বয়স আমার বাবার সমান। তার নাম জানিনা! তো পরদিন পড়তে গিয়েছি হুজুরের ছেলের কাছে। দক্ষিণপাড়ার ব্রিজের গোড়ায় রাস্তার পাশেই ছোট একটা মসজিদ; যেখানে নিয়মিত পড়তে যাই। আমার ভাইয়া যেহেতু আমার চেয়ে বয়সে বড় এবং বরারবরের মতোই আমার চেয়ে ব্রিলিয়ান্ট; তাই তার পড়া আমার আগেই শেষ হয়ে যায় এবং সে তার বই-পুস্তক আমার কাছে দিয়ে খেলার মাঠে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসলেও হুজুরের ছেলে আমাকে ছুটি দেয় না। আমি মাথা ঝুকে ঝুকে পড়ছি।

এ সময় হঠাৎ করেই লোকটা খুব নোংরাভাবে আমার গায়ে হাত দেয়। আমাকে হায়েনার মতো টেনে মসজিদের এক কোণে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে তার পুরুষাঙ্গ আমার মুখে ঠেসে দেয়; এতে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। আমি প্রাণপণ ছোটার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। সেদিন আমি কেবল এটুকু ফিল করেছিলাম যে, আমার দম চলে যাওয়ার সময় একটি ছেলে সন্ধ্যেবেলার বাতি জ্বালাতে মসজিদে ঢোকে। এতেই আমার জীবনের বাতি জ্বলে উঠে। আমি দম ফিরে পাই এবং মসজিদ থেকে বের হয়েই বমি করে দেই। ওই নোংরা লোকটা তখন আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলছিল, যদি এই কথা কাউকে বলি তাহলে আল্লাহ আমাকে অনেক বড় গোনাহ দেবে! আমি বাড়ি ফিরে রান্নাঘরের ঢেকির চিপায় চুপচাপ বসে কাঁদছি।

তাহেরা স্ট্যাটাস। পরিশুদ্ধির জন্য হায়েনারা ধর্ম কিংবা রাজনীতির ছায়াতলে আশ্রয় খোঁজে।

 

অভিযোগ আসে খ্যাতনামা আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী জাকিয়া সুলতানা মুক্তা তার কাছ থেকেই আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নেওয়া এক ছাত্রী। ১১ নভেম্বর নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে  জাকিয়া লিখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি কক্ষে অনুশীলনের ছলে মাহিদুল তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন আরেক সহপাঠীর আকস্মিক উপস্থিতিতে সেদিন রক্ষা হয়। অবশ্য অন্যান্যদের মত তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এর আগে ৮ নভেম্বর জার্নালিজম ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জেএটিআরআই) প্রধান জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন আসমাউল হুসনা নামের এক নারী। জোর করে চুমু খাওয়ার ঘটনা জানিয়ে ওই নারী লিখেন, ‘আমি খুবই ভীত ও হতভম্ব হয়ে যাই। সেদিন আমি সারা রাত কেঁদেছি এবং ঘুমাতে পারিনি। আমি বাইরে যেতে ভয় পেতাম এবং নতুন মানুষের সাথে দেখা করতে ভয় পেতাম। এই ট্রমা ও ভয় থেকে বের হতে আমার বছরের পর বছর লেগেছে। তবে সম্পূর্ণভাবে ক্ষত সেরে ওঠেনি।’

মুমতাহানা ইয়াসমিন তন্বী নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীও অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের এ ছাত্রী লিখেছেন, যে অমানুষটার কথা আমি বলব, তার নামটা সঙ্গত কারণেই নিচ্ছি না। নাম নিলে লোকে জানবে, কিন্তু কেউ তাকে অপরাধী বলবে না। সম্পর্কে সে আমার ‘আংকেল’ শ্রেণীর। তিনি বলেন, ‘কোন একদিন শুক্রবারের সকাল। ধরি, অমানুষটার নাম 'শুয়োর' (বয়সে আমার থেকে ১৫-১৬ বছরের বড় হবে)। ছোটবেলা থেকে এই শুয়োরের কোলে পিঠে বড় হয়েছি। শুক্রবার হওয়ায় ওই দিন স্কুল ছুটি। খেলা করতে শুয়োরদের বাড়িতে গিয়েছি। শুয়োরের বাড়ির কেউ একজন বললেন, দেখ তো তোর আংকেল এখনও ঘুম থেকে উঠেনি, ডেকে দে। আমি ডাকতে গেলাম শুয়োরকে। শীত থাকায় আমাকে বলল, আয় লেপের ভেতর ঘুমা, এত সকালে উঠে কাজ নাই। আমি তখন তসলিমা নাসরিন পড়িনি। তাই আমি জানিনা, শুয়োর প্রজাতি ঘরেও থাকে। আমার সেই ছোট্ট শরীরে সে কী করেছিল; তা আমি ঠিক বলতে পারব না। শুধু বলতে পারব, আমি ব্যাথা পেয়েছিলাম।’

তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগায় বিখ্যাত নাট্যকার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রয়াত সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন প্রয়াতেরই এক ছাত্রী। নাম মুশফিকা লাইজু। সেলিম আল দীনকে যৌন নিপীড়ক আখ্যা দিয়ে তিনি লিখেন, বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষক ও নাট্যগুরু। আশ্চার্য! এখনো প্র‌তিবছর ছ‌বি‌তে মালা ঝুলি‌য়ে তা‌কে মহান আখ্যা দেয়া হয়। দিন কতক ধ‌রে যখন ভাব‌ছিলাম, আ‌মিও আমার প্র‌তি হওয়া ৩১বছর আ‌গে যৌন হয়রা‌নির কথা #me too তে লিখ‌ব। তখনই অ‌নে‌কেই আমা‌কে পরামর্শ দি‌য়ে‌ছেন না লিখ‌তে। কারন, তি‌নি মারা গি‌য়ে‌ছেন; তা‌কে যেন ক্ষমা ক‌রে দেই। তাছাড়া এখন আর লি‌খে ‌কী হ‌বে? আ‌মি থামলাম, ভাবলাম এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম— একজন নিযার্তনকারীকে মৃত্যু এ‌সে মহান ক‌রে দি‌তে পা‌রে না। আর আজ য‌দি আ‌মি না লি‌খি, ত‌বে আগামী পৃ‌থিবী আজীবন তা‌কে মহান বা‌নি‌য়ে রাখ‌বে। হয়তো আমার কন্যাও এক‌দিন তাকে শ্রদ্ধাভ‌রে মালা দি‌তে যা‌বে মহান  হিসা‌বে!

বিখ্যাত এ নাট্যকারকে নিয়ে লাইজুর এমন অভিযোগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের মত লিখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘‘সেলিম আল দীন নাট্যকার হিসেবে অসাধারণ। আমার পিএইচডি থিসিসের নির্বাচিত একটি চলচ্চিত্র তার নাটক থেকে নির্মিত ছিল। তখন তাকে নিয়ে কিছু পড়াশোনা করেছি। নব্বই দশকের প্রথম ভাগে তার লিখিত ঢাকা থিয়েটারের প্রডাকশনগুলো একেকটি এপিক ছিল। আমি তার গুণমুগ্ধ। তবে শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হওয়া নিপীড়ক না-হওয়াকে নিশ্চিত করে না। বরং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হিসেবে দূর থেকে নানান সময়ে তার যৌন আসক্তির কথা শুনেছি। তার শৈল্পিক গুণপনা তার জৈবিক অপরাধের ইনডেমনিটি দেয় না।’’

মডেলিংয়ের মাধ্যমে এভাবেই নিপীড়নের নানা স্বরূপ তুলে ধরা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী

 

মি টু: প্রতিবাদ না ব্যক্তিগত আক্রোশ? 

বিশ্বব্যাপী ঝড় তুলেছে 'হ্যাশট্যাগ মি টু' যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন। রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন তারকা অভিনেতা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন বহু নারী। নিপীড়নের শিকার হলেও নানা চাপ, ভয় ও সংকোচের কারণে তারা তা প্রকাশ ও প্রতিবাদ করতে পারেননি। হ্যাশট্যাগ মি টু নিপীড়নের শিকার এমন নারীদের তাদের বুকের মাঝে চেপে রাখা কষ্ট প্রকাশের অভিনব সুযোগ। তবে এটিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সস্তা পরিচিতির হাতিয়ার হিসেবে মনে করছেন অনেকে। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার ও প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

সমাজবিজ্ঞানী আহসান হাবীব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’কে বলেন, ‘মি টু’ নারী আন্দোলনের নতুন ধারা। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ, আমাদের নারীরা নির্ভয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে পারছে। তবে হতাশার দিক হলো, অভিযোগগুলোর তদন্ত হচ্ছে না। আপাতদৃষ্টিতে হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করাই মি টু’র প্রাপ্তি। এখন ভবিষ্যৎটা দেখার পালা।

সর্বোপরি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমাদের সমাজে মেয়েরা নানাভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু সেই নির্যাতনের কথা কারো কাছে বলতে গেলে উল্টো তাকে অপদস্ত হতে হয়। দুর্বলতা কিংবা সমস্যা না থাকলে সেসব ঘটনা হতো না বলে পাল্টা কথা শুনতে হয় মেয়েদের। সমাজের এমন মানসিকতার কারণে নিপীড়নের শিকার হয়েও মেয়েরা তা চাপা দিয়ে রাখেন। নীরবে সেই নিপীড়নের যন্ত্রণা বয়ে বেড়ান। মি টু আন্দোলন নারীদের অব্যক্ত নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশের নতুন একটি মাধ্যম। সমাজের ভদ্রবেশি নষ্ট কিছু মানুষের চরিত্র তুলে ধরনে নারীদের সাহস দিচ্ছে।

নিজ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ‘দ্যা ডেইলি স্টার’

গত ১৪ নভেম্বর ডেইলি স্টারের সাবেক চীফ রিপোর্টার ও বর্তমান কূটনৈতিক প্রতিবেদক রেজাউল করিম লোটাসের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেন পত্রিকাটির সাবেক এক সংবাদ কর্মী আলফা আরজু।  

 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পত্রিকাটি। ডেইলি স্টার কর্তৃৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাবেক ওই কর্মী। 


সর্বশেষ সংবাদ