২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২১

স্কুলের অফিসে শিক্ষক অবরুদ্ধ, উদ্ধার করল সেনাবাহিনী 

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের  © ফাইল ছবি

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে শিক্ষককে অবরুদ্ধ রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ( ১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে স্কুলটিতে এ ঘটনা ঘটে।

স্কুল সুত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক কবির আহমেদ চৌধুরী ও সিনিয়র শিক্ষক হারুন অর রশিদদের বিরুদ্ধ শিক্ষার্থীদের যৌনহয়রানিসহ নানান অভিযোগ তুলেছেন। ওই শিক্ষকদের বদলি দাবিতে গত ২৫ আগস্ট শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এবং স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

এদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকে সপ্তাহে এক দিন এসে স্কুল শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নির্দেশনা মেনে চললেও সিনিয়র শিক্ষক হারুন অর রশিদ নির্দেশনা অমান্য করে প্রায়শই স্কুলে ঢুকে পড়তেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। ওই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত রবিবার জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছে। 

আরও পড়ুন: মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হারুন অর রশিদ স্কুলে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে তাকে  প্রায় দুই ঘন্টা তালাবদ্ধ করে রাখে। বেলা ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তাকে মুক্ত করেন। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রধান শিক্ষক কবির আহমেদ চৌধুরী ও সহকারী শিক্ষক হারুন স্যারের বিরুদ্ধে যৌনহয়রানি অভিযোগ ছিল। তদন্তে সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। এরপর ইউএনও স্যার তাদের বদলি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেছিলেন। স্যারের এই নির্দেশনা না আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। অভিযুক্ত দুই শিক্ষকে দ্রুত বদলি করে বিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

আরও পড়ুন: শামীম হত্যার অভিযোগে ৮ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করলো জাবি

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ায় তাদেরকে বিদ্যালয়ে আসতে বারণ করেছিল ইউএনও স্যার, কিন্তু হারুন সাহেব স্যারের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ে আসতেন আর ছাত্ররা ক্ষেপে উঠত। অন্যদিন থামাতে পারলেও গতকাল আমাদেরসহ রুমে আটকে দেয় ছাত্ররা। পরে আমাদের চারজন শিক্ষকে বের হতে দিলেও হারুন সাহেবকে প্রায় দুঘণ্টা আটকে রাখে। পরে সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করেছে। তাকে মদন সেনা ক্যাম্পে যাওয়া হয়েছিল বলেও শুনেছি।

জানতে চাইলে ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধ অভিযোগের সত্যতা পাই এবং শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ তাই কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই লক্ষে তারা দুইজনকে বিদ্যালয়ে কয়েকদিন না আসাতে বলেছিলাম। এরপরও হারুন সাহেব প্রায় সময় বিদ্যালয়ে এসে পড়তেন এবং নানান কথা ছড়াতেন। এ নিয়ে ছাত্ররা উত্তেজিত ছিল।  বৃহস্পতিবার স্কুলে আসলে তাকে অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী এসে তাকে উদ্ধার করেছেন। 

তিনি আরো বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে তাদের বিরুদ্ধ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে অন্যত্রে বদলির সুপারিশ করা হয়েছিল।