০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪

তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ

রাজধানীর ফার্মগেটের তেজগাঁও মহিলা কলেজে ছাত্রীদের বিক্ষোভ  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর ফার্মগেটের তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের পদত্যাগসহ ১৫ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন ছাত্রীরা। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অতিরিক্ত ফি আদায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও শিক্ষকরা দাবি করেছেন, ‘অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্রীদের সময় কাটানোর অনৈতিক প্রস্তাব দেন।’

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন একদল ছাত্রী। বিক্ষোভ চলাকালীন অধ্যক্ষ কলেজের তৃতীয় তলায় তাঁর কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। তারা দাবি করেন, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অবৈধভাবে ছাত্রীদের ফরম পূরণ, ভর্তি ও অন্যান্য খাতে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের পর্যপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। 

সকালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজেকে তেজগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি দাবি করে ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে ছাত্রীরা রাজনৈতিক পরিচয় শুনে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি ক্যাম্পাস থেকে সরে পড়েন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী পান্না আক্তার দাবি করেন, অধ্যক্ষ নানা সময় ছাত্রীদের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সময় কাটানোর অনৈতিক প্রস্তাব দেন। কোনও ছাত্রী বেতন-ফি না দিতে চাইলে এই প্রস্তাব দেয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কারো কারো অভিযোগ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন অধ্যক্ষ। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজপথ নামানো হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নানাবিধ অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়। কোনও মেয়ে বেতন দিতে না পারলে তাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সময় কাটাতে বলা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারী সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগী অধ্যক্ষকে আমরা চাই না। অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফরম ফিলাপের সময় অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা নিয়ে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন। যা সুস্পষ্ট আর্থিক দুর্নীতি। কোনো দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আমাদের কলেজে থাকবে না।

ছাত্রীরা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা সময়ে নানা কারণে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। বিভিন্নভাবে নিপীড়ন করেছেন। অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট কর্মচারীরা ছাত্রীদের সঙ্গে হয়রানিমূলক আচরণ করে চলেছে। তারা এর বিচার চান। এ সময় একাধিক কর্মচারীরও শাস্তি দাবি করেন তারা।

তারা বলেন, মহিলা হোস্টেলে পুরুষ কর্মচারী কামরুলের অবাধ যাতায়াতে ছাত্রীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তাছাড়া নানা কারণে কামরুল ছাত্রীদের হুমকি দিয়েছে তার প্রমাণ আছে। কামরুলের স্থায়ী বহিষ্কার চান শিক্ষার্থীরা। যে সব শিক্ষার্থী কলেজের বিগত সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেনি এবং উপস্থিত হয়নি, তাদের থেকেও বাধ্যতামূলকভাবে পরবর্তীতে ফি নেওয়া হয়েছে যা কোনো ভাবেই অনুষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাবের সঙ্গে যুক্ত নয়। এইটা সুস্পষ্ট অধ্যক্ষের অর্থ আত্মসাৎ হিসেবে বিবেচিত। ছাত্রীরা এর বিচার চায়।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে দফায় দফায় অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যক্ষ স্যার পরবর্তীতে কথা বলবেন।

আরো পড়ুন: রাজশাহীতে ভুয়া সমন্বয়কের অভিযোগে এসআইকে বদলি, আসল জনের জিডি

বেলা পৌনে বারোটার দিকে নিচে নেমে আসেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি ছাত্রীদের তোপের মুখে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দেয়া হোক। তদন্তে যদি আমি দোষী প্রমাণিত হই সে ক্ষেত্রে যে শাস্তি দেয়া হবে তাই মাথা পেতে নেবো। 

তিনি দাবি করেন, কর্মচারী কামরুলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কমানো হয়েছে। ফরম পূরণের ফিও কমানো হয়েছে। আমরা সিনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে সব অভিযোগ তদন্ত করবো।