বেরোবির আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের শিক্ষার্থী কারাগারে
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় রংপুরের পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার বোন সানজানা আক্তার স্নেহা।
মাহিমের বোন স্নেহা তার ফেসবুকের এক পোস্টে লেখেন, ১৮ তারিখ সে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত, তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তিতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে, সেখানের লোকাল মানুষজন কোনো হসপিটালে অ্যাডমিট করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, বাবার কাছে একটা কল আসে, তারা জানায় আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করিয়েন না তাতে ছেলের ক্ষতি হবে, তাকে আগামীকাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু পরের দিন ১৯ তারিখ সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল ৪.৩০টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
“আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম তাকে আবু সাইদ ভাই এর হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ।”
তিনি লেখেন, মেট্রো কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু কোর্টে দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দিবে আমার জানা নেই, তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই, বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই। যে ছেলেটা লিগাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু, এমনকি মামলায় প্রদত্ত ঘটনার সময় সরকারি হাসপাতালে অ্যাডমিট ছিল, তাকে তারা কোন হিসেবে এভাবে হ্যারাস করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল, আইডি ছিল, সে পুলিশদের ইনস্টিটিউট এরই ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারো কিছুই করার নাই? আমার ভাই কে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সানজানা আক্তার স্নেহা বলেন, আমরা আজকে অন্যভাবে চেষ্টা করছি। আজ আমরা কথা না বলি।
মাহিমের বোন জানান, তার ভাই রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কলেজ আইডি-১৭৬৬০, বয়স ১৬ বছর ১০ মাস।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) বলেন, ১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিনসের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া অবস্থায় আটক হয় মাহিমকে। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, যেহেতু ১৮ এবং ১৯ তারিখে সংঘাত–সংঘর্ষ নিয়ে পুরো ফোর্স ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ তারিখ থেকে আমরা যাচাই বাছাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করেছি। বিষয়টি আমাদের নলেজে আসা মাত্রই পুলিশ কমিশনার মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেহেতু মাহিম ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিল মাত্র। জামিনের মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।