২৪ জুলাই ২০২৪, ২০:৪০

‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী, সে কীভাবে ভাঙচুর করবে?’

‘শারীরিক প্রতিবন্ধিতা’ থাকলেও আশিক নামের এ কার্ডধারীকে ধুরে এনেছে পুলিশ। কার্ড প্রদর্শন করছেন তার মা।  © সংগৃহীত

দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৯৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী চলা এ সহিংসতায় কয়েক হাজার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন স্থানে মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলা এখন চলছে ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই ঘটনার সাথে জড়িত না থাকলেও তাদের পুলিশ তুলে এনেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। 

সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় তেমনই চিত্র দেখা গেল রাজধানীর তেজগাঁও থানায়। থানার গেট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অন্তত ১৫-১৬ জন নারী আর দুই তিনজন তরুণ। কেউ কাঁদছেন। কেউ বা ফোনে কথা বলছেন। কয়েকজন নারী গেট দিয়ে প্রবেশ করতে যাওয়া পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। 

তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই কয়েকজন নারী ও এক সিএনজিচালক এগিয়ে আসেন। চালক বললেন, ভাই এদের কথা একটু শুনেন। বিপদে পড়েছে। অবিরাম কাঁদছেন এক নারী। কাছে এগিয়ে গেলে তিনি একটি কার্ড বের করলেন আঁচল থেকে বললেন, স্যার আমার ছেলে প্রতিবন্ধী, এই যে দেখেন। একটি কারখানায় কাজ করে প্যাকেজিংয়ের। বাসা থেকে ধরে নিয়ে আসছে। 

আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: ইন্টারনেট বন্ধে ৫ দিনে যা যা ঘটেছে

তারা বলছে, আন্দোলনে ভাঙচুরের সঙ্গে আমার ছেলে জড়িত। কিন্তু আমার ছেলে ঠিকমতো হাঁটতেই পারে না। তার এক পা ভাঙা। মোর্শেদা বেগম নামের এই নারী তার ছেলের প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড বের করে দেখান। কার্ডে দেখা যায়, ছেলেটির নাম আশিক। ১৬ বছর বয়স। প্রতিবন্ধীর ধরণ হিসেবে উল্লেখ করা ‘শারীরিক প্রতিবন্ধিতা’। ঠিকানা-৩৪৩, পূর্ব নাখালপাড়া, ওয়ার্ড-২৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। 

আশিকের মা মোর্শেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী, সে কীভাবে ভাঙচুর করবে? বুঝতেছি না। 

আমার ছেলে কী করছে—এমন প্রশ্ন রেখে এই নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাবাগো আমার ছেলেকে বাঁচান। আপনারা একটু বাঁচান, আমি আমার ছেলেকে দেখতেও পাচ্ছি না। 

এসময় পাশ থেকে আরেকজন নারী বললেন, আমার ভাইরে ধরে আনছে। আমরা মানুষের বাসার কাজ করি। ১৪/১৫ বছর বয়স আমার ভাইয়ের। সে কীভাবে ভাঙচুর করেছে? আমর এখন ভাইকে ছাড়িয়ে আনবো। 

ঠিক তার পাশে পড়িতে সিয়াম নামের এক তরুণ চোখ মুছছিল। এরপর তিনি বললেন, নাখালপাড়া আমার ছোট ভাই সিফাতকে ধরে আনা হইছে। আমার ভাইয়ের বয়স ১৫/১৬ বছর। তার বন্ধুদেরও ধরে আনা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন: নিহত বেড়ে ১৯৭

এদিন বেলা সাড়ে ১২ টায় মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, থানা থেকে বলা হয়েছে আগামীকাল কোর্টে খোঁজ নেন। উকিল ধরেন। আমি এখন কই যাবো আপনারাই বলেন?

দুপুর ১টা নাগাদ কথা হয় সকালে থানার গেটে থাকা বীণা নামের আরেক নারীর সঙ্গে। তার বাসাও নাখালপাড়ায়। তিনি তার বোনের স্বামী ও বোনের ছেলেকে খুঁজতে এসেছিলেন। বীনা বলেন, কাল রাত ১টার দিকে আমার বোনের বাসায় পুলিশ আসে। বোন জামাই ও বোনের ছেলেকে ধরে। ছেলের বয়স ১৭ বছর। মাদ্রাসার ক্লাস নাইনে পড়ে। বোন জামাই রিকশা চালায়। আমরা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করছিলাম কেন ধরতেছেন। তারা আমাদের ধমক দেয়। বলে থানায় সকালে গিয়ে খোঁজ নিও। 

আজ সকালে এসেও দেখা পেলাম বোন জামাই আর ভাগ্নের। জানতে চাইলে বলে, কাল কোর্ট খুললে কোর্টে যাও তোমরা। চালান করে দেয়া হইছে। উকিল ধর। কেন ধরছে—কিছুই বলছে না, জানতেও পারছি না—বলেন বীণা নামের এই নারী।