মানুষের হাত-পা কেটে ‘পৈশাচিক আনন্দ’ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার
মানুষের হাত-পা কেটে ‘পৈশাচিক আনন্দ’ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার। তার আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসা গরিব-অসহায় মানুষের শরীরে পচনের কারণে যখনই সার্জারির দরকার হতো তখন নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতেন।
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
রোববার (৬ মে) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ রাজধানীরি মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকেদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা গরিব ও অসহায় মানুষকে তুলে এনে আশ্রয় দেওয়া হতো ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' আশ্রমে। তাদের কারও কারও হাত-পায়ে পচনও ধরেছিল। যখন অপারেশন প্রয়োজন হতো, তখন আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার নিজে বেলেড-ছুরি দিয়ে তাদের হাত, আঙুল কেটে ফেলতেন।
তিনি বলেন, একজন চিকিৎসককে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে রেখেছিলেন মিল্টন। মাসে একবার এসে দেখে যেতেন রোগীদের। ওই চিকিৎসকের নামে সিল তৈরি করে নিজেই স্বাক্ষর করে মৃত্যুসনদ তৈরি করতেন। ওই চিকিৎসককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, এসবের কিছুই তিনি জানতেন না।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথিক মানুষ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়? তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে নির্যাতন করে বেলড-ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন, তাদের যে বানর বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন।
তিনি স্বীকার করেছেন, এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে বে্লড ছুরি জব্দ করেছি।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। একটি-দুটি অপরাধ করেননি, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তো ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনো ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এত টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজ করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
৯০০ লোকের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার পুলিশকে জানিয়েছেন, আসলে ৯০০ মানুষ মরেনি। ১৩৫ জন মারা গেছে। তাদের দাফন করেছে। সেটারও তিনি রেজিস্টার্ড সংগ্রহে রাখেননি। এত মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে।
এদিকে আশ্রমের মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে রোববার মল্টিনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অপরদিকে তার বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।