২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩০

ছয়তলা থেকে লাফ দেওয়া সেই ছাত্রী ছিলেন ট্রান্সজেন্ডার, মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাসে যা লিখেছিলেন

রাদিয়া তেহরিন উৎস ওরফে উৎস ইসলাম মন্ডল  © সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরে ব্যতিক্রম মহিলা হোস্টেলের ছয়তলার ছাদ থেকে পড়ে রাদিয়া তেহরিন উৎস ওরফে উৎস ইসলাম মন্ডল (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি মিরপুরের বাংলা কলেজে পড়াশোনা করতেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। 

রাদিয়া তেহরিন উৎস গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সুন্দরী প্রতিযোগিতার (বিউটি পেজেন্ট শো মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশ) অডিশন রাউন্ডে ইয়েস কার্ড পেয়েছিলেন। প্রথম কোন ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তিনি এই ইয়েস কার্ড পেয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানে রাদিয়া তেহরিন উৎস জানিয়েছিলেন, তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি বিশ্বের সামনে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে চান। ‘আমরা, ট্রান্সজেন্ডার নারীরা সুন্দর, প্রতিভাবান এবং আমাদের অন্য যে কোনও মানুষের মতো শিক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে’।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে হোস্টেলের ছয় তলা থেকে নিচে পড়লেন কলেজছাত্রী

জানা গেছে, মিরপুরের বাংলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে (বাংলা বিভাগ) পড়াশোনা করতেন রাদিয়া তেহরিন উৎস। রাদিয়ার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায়। বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন।

মৃত্যুর পর তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন, রাদিয়া তেহরিন উৎস আসলে আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সমাজ ও সমাজের মানুষেরা তাকে হত্যা করেছে। মানুষের জীবনকে যে বা যারা অসহনীয় করে তুলেছেন। শরীফ শরীফা ইস্যু যারা দাঁড় করিয়েছেন। নিয়মিত বুলি করছেন। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী তারা প্রত্যেকেই।

ট্রান্সজেন্ডার নারী হো চি মিন ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, উৎস আমাদের ট্রান্সজেন্ডার মেয়েটা। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় এসে লাইমলাইটে এসেছিল। আজ ফেসবুকে জানান দিয়ে আত্মহত্যা করলো। ছয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেলো।  আমাকে ক্ষমা করো উৎস! আর কারো কথা জানি না। তবে আমার আফসোস তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না আমি! স্রোতের বিপরীতে এ সমাজে টিকে থাকা কতটা কঠিন। যে বাচে সেই জানে!  কোথায় আমার মানসিক স্বাস্থ্য, কোথায় আমার সমাজ, কোথায় আমার কি? কিচ্ছু নাই! কোন কম্পলেইনও নাই!

মুনতাসির রহমান নামে একজন ফেসবুকে লাইভে এসে বলেন, রাদিয়া তেহরিন উৎস একজন ট্রান্সউইমেন। হোস্টেলের ৬ তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। এটা আত্মহত্যা নয়, এটা হত্যা। এর পিছনে দায়ী পরিবার, সমাজ, দেশে বিরাজমান ট্রান্সফোবিয়া, ঘৃণা, হয়রানি, আক্রমণ। এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

এদিকে, মৃত্যুর আগে রাদিয়া তেহরিন উৎস ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি আজ রাতে সুইসাইড করতে যাচ্ছি। আমার সোশাল মিডিয়ার একাউন্টগুলো ডিলিট করার খুব চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। আমার ফোনের সব লক খুলে গেলাম, কেউ ফোন পেলে আমার সব একাউন্ট ডিলিট করে দেবেন দয়া করে।

জানা গেছে, সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে মিরপুর ১০ মহুয়া মঞ্জিল ব্যতিক্রম মহিলা হোস্টেলের ৬তলা থেকে ছাত্রী রাদিয়া লাফিয়ে নিচে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মিরপুর মডেল থানার এসআই মাইনুল ইসলাম জানান, রাদিয়া তেহরিন ব্যতিক্রম হোস্টেলে থেকে মিরপুর বাংলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে (বাংলা বিভাগ) পড়াশোনা করতেন।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আজকে ব্যতিক্রম মহিলা হোস্টেলের ছয়তলা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যান রাদিয়া। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। মৃত্যুর কারণসহ বিস্তারিত ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।