ভারতীয় সিনেমা দেখে অস্ত্র রাখার পরিকল্পনা করেন শিক্ষক রায়হান শরীফ
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় স্থানীয় কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রায়হান শরীফের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে আজ। রিমান্ড শেষে শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন বলেন, রায়হান শরীফের পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। আজ সকালে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
এর আগে বিগত ৪ মার্চ বিকেলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিনের পায়ে গুলি করেন প্রভাষক রায়হান শরীফ। ওই শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ৮১টি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ শিক্ষকের
এ ঘটনায় রায়হানের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটির বাদী গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল্লাহ আল আমিন। তিনি ছেলেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ এনেছেন। এ মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রায়হান। অপর মামলাটি করেন সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আবদুল ওয়াদুদ। অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১১ মার্চ আদালত তাঁর (রায়হান) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবির পরিদর্শক জুলহাজ উদ্দীন বলেন, একজন শিক্ষক হয়েও রায়হান শরীফ কেন, কী কারণে অস্ত্র-গুলি নিজের সংগ্রহে রাখতে গেলেন, তার প্রকৃত কারণ বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের একটি হিন্দি সিনেমা দেখেই মূলত নিজের কাছে এমন অস্ত্র রাখার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।
রায়হান শরীফের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রায়হান অস্ত্রের ব্যাপারে খোঁজ নেন। তবে উপযুক্ত সোর্স না পাওয়ায় তাঁর পরিকল্পনা সফল করতে একটু সময় লেগে যায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে রাজশাহী শহরে তাঁর পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকায় এক অস্ত্র কারবারির সঙ্গে পরিচয় হয়।
আরও পড়ুন: মেডিকেল ছাত্রকে গুলি, ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন
রায়হান নিজেই কুষ্টিয়ায় গিয়ে প্রথমে একটি অস্ত্র কেনেন। গত ডিসেম্বরে আবার কুষ্টিয়া গিয়ে ওই একই ব্যক্তির কাছ থেকে আরেকটি অস্ত্র কেনেন। সেখান থেকেই তিনি গুলিও কেনেন। তিনি অনলাইনে ছবি দেখে বিদেশি চাকু সংগ্রহ শুরু করেন—জানান এই ডিবি কর্মকর্তা।
জুলহাজ উদ্দীন জানান, শখের বশে অস্ত্র, গুলি ও চাকু কিনে সংগ্রহ করতেন রায়হান শরীফ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও কিছু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। অস্ত্র ব্যবহার করে অবৈধ কোনো কাজ করার ছক রায়হানের ছিল কি না, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত রায়হানের কাছে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে একজনের নাম পাওয়া গেছে। এই চক্রে আরও কেউ রয়েছেন কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছি। যাঁর কাছ থেকে রায়হান শরীফ অস্ত্র কিনেছিলেন, সেই ব্যক্তি পেশাদার অস্ত্র কারবারি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ৫ মার্চ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মার্চ শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।