জাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, ভোগান্তীতে শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ে কার্যালয়ে না আসা, অফিস চলাকালীন সময়ে কার্যালয়ে অনুপস্থিত ও সময় শেষ হওয়ার আগেই কার্যালয় ত্যাগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে ভোগান্তীতে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল চারটায়। ওই সময়ে মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতি থাকে দুপুর ১টা হতে দেড়টা পর্যন্ত। কিন্তু এই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন শিক্ষকের প্রভাবে ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় সশ্লিষ্ট অফিস প্রধানদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ কারনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ায় এ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অফিস প্রধানরা ফাঁকিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

গত ৯-১৩ সেপ্টেম্বর টানা পাঁচ কর্মদিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কর্মংকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম ও কার্যালয়ে উপস্থিতি পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। নতুন প্রশাসনিক ভবনে রেজিস্ট্রার ও কম্পট্রোলার কার্যালয়ে প্রায় ৬৪জন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর দেড় ঘন্টা পর সকাল ১০টায় নিজ কার্যালয়ে পাওয়া গেছে মাত্র ২৫জন কর্মকর্তাকে। মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতির পর নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা পর কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৮ জন কর্মকর্তা। তবে এদের মধ্যে নির্ধারিত বিরতির পরে নিজ কার্যালয়ে খাবার খেতে দেখা গেছে। এছাড়াও ৩টার আগেই প্রায় ৩০জন কর্মকর্তা কার্যালয় ত্যাগ করেন।

এছাড়া অফিস চলাকালীন সময়ে ২০-২৫ জন কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্তর, কামাল উদ্দিন হল সংলগ্ন বটতলা ও ব্যাংকের পার্শবর্তী চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দিতে দেখা গেছে।
এর আগে, ৩১ জুলাই হতে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ কর্মদিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেসময়েও একই চিত্র উঠে আসে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘কিছু কর্মকর্তা অফিসে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম করে। এটা সত্য। তবে অনেক সেকশনে পর্যাপ্ত কর্মচারী নেই। ফলে আমাদেরকেই ফাইল নিয়ে বিভিন্ন অফিসে যেতে হয়। তাই অফিস চলাকালীন সময়ে অনেককেই নিজ কক্ষে পাওয়া যায় না। অফিসগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী থাকলে আমাদের কাজ আরো গতিশীল করা সম্ভব হবে।’
তবে কার্যালয় চলাকালীন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার্থীর কার্যক্রম সংক্রান্ত কার্যালয়ে ভোগান্তিতে পড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি ফরমে স্বাক্ষরের জন্য তিন দিন কার্যালয়ে এসে কর্মকর্তাকে পায়নি। তাদের অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে প্রশাসনের নাজরদারি বাড়ানো উচিত।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘আমি কার্যালয়গুলো নিয়মিত তদারকি করছি। যেসকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসছে তাদেরকে ডেকে প্রথমে সতর্ক করছি। পরবর্তীতে কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে কম্পট্রোলার মো. মুসানুল কবীর বলেন, যারা ঢাকায় থাকেন তারা জ্যামের কারনে কার্যালয়ে আসতে দেরি হয়। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ আমার নজরে আসেনি। এ ধরনের অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ