০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫৭

প্রাথমিকের পরীক্ষায় জালিয়াতিতে তিন জেলায় আটক ৪৪, বহিষ্কার ২৬

  © সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের লিখিত (খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগ) পরীক্ষা আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন বিভাগের ২২টি জেলা শহরে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘন্টার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে তিন জেলায় ৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে। পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষার দিন তাদের আটক করা হয়। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বহিষ্কার করা হয়েছে ২৬ পরীক্ষার্থীকে। 

বগুড়ায় আটক ২২, বহিষ্কার ২৬
বগুড়ায় মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে ২২ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে নারী পরীক্ষার্থী আছেন ১৫ জন। এছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে ২৬ জনকে। আটক পরীক্ষার্থীদের বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করেছে জেলা প্রশাসন। বগুড়া শহরের ৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আটক ২২ পরীক্ষার্থী গোপনে কেন্দ্রের মধ্যে মুঠোফোন নিয়ে যায়। তারা প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সংগ্রহ করছিলেন। পরে কানে ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে উত্তরপত্র ভরাট করার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের আটক করেন। এছাড়াও ২৬ জন শিক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়৷

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি মজিবর রহমান মহিলা কলেজসহ ১১টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ২২ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জনকে বগুড়া সদর থানায় এবং ৩ জনকে শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুজ্জামান বলেন, আটকদের নামে পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক ১০টি মামলা দায়ের হবে।

নওগাঁয় ১৬ জন আটক
নওগাঁয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দুইজনকে অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ বিকেল ৪টার দিকে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা। এর আগে সকালে পরীক্ষা চলাকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এ দণ্ড দেন।

জেলা প্রশাসক জানান, নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে মান্দা উপজেলার মমিন শাহানা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে তিনজন চাকরি প্রত্যাশীর কাছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। এ অপরাধে মিঠুনকে একমাস, সুলতানকে একমাস এবং রবিউল ইসলামকে ১০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই উপজেলার শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল কেন্দ্র থেকে আটক নাইমুর রহমান ও মোস্তাফিজুর বিন আমিনকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আরও পাঁচজনকে আটক করা হয়। যেখানে জারজিস আলমকে ১০ দিন, ফজলে রাব্বি মণ্ডলকে একমাস, নুর আলমকে সাত দিন, জামাল উদ্দিনকে ১০ দিন এবং আব্দুল্ল্যাহ সাইরাফিকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নওগাঁ সদর উপজেলার বশির উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ (বিএমসি) কেন্দ্রে দুইজনকে ৫০০ টাকা করে মোট একহাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  

সদর উপজেলার চক এনায়েত উচ্চবিদ্যালয় এবং পাহাড়পুর জিএম হাইস্কুল কেন্দ্র করে একজন করে মোট দুইজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় একজনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বদলগাছী উপজেলার পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দের পর তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। 

পরীক্ষা চলাকালে জয়পুরহাটে ডিভাইসসহ আটক ৩
জয়পুরহাটে আজ পরীক্ষা চলাকালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান, একই উপজেলার তাজপুর গ্রামের মোস্তাকিম হোসাইন এবং আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার সানজিদা বেগম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এক নারীসহ তিন পরীক্ষার্থীকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ আটক করা হয়েছে।  তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

জয়পুরহাটে পরীক্ষার আগে অধ্যক্ষসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার
২০-২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে  টিকিয়ে দেবার নিশ্চয়তা দেবার প্রলোভনের অভিযোগে গত ৩১ জানুয়ারি অধ্যক্ষসহ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের তিন সদস্যকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ গ্রেফতার করে জয়পুরহাট জেলা ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো জয়পুরহাটের পাঁচবিবি কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুস্তম আলী, মো. ইশান ইমতিয়াজ, গোকুল, বগুড়া সদর এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের রোকনুজ্জামান।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। 

পরীক্ষার আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, প্রথম পর্বের পরীক্ষার সময়ও এ ধরনের চক্র সক্রিয় ছিল। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সজাগ ও সতর্ক ভূমিকার দরুন তাদের অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় ধাপেও যেকোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।