বিশ্বের অর্ধেক কিশোর-কিশোরী সহপাঠীর সহিংসতার শিকার
বিশ্বের অর্ধেক কিশোর-কিশোরী বিদ্যালয়ে এবং এর আশপাশে সহপাঠী বা সঙ্গীদের কাছে সহিংসতার শিকার হয় বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘অ্যান এভরিডে লেসন: অ্যান্ড ভায়োলেন্স ইন স্কুলস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১৫ কোটি শিশুর শিক্ষাগ্রহণ বিঘ্নিত হয় শারীরিক নির্যাতন ও কটূক্তি বা গালাগালের কারণে। সহপাঠী অথবা সঙ্গীদের কাছে যারা গত একমাসে কটূক্তি বা গালমন্দের শিকার হয়ে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে, অথবা শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন শিক্ষার্থীদের বিবেচনায় নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এধরনের আচরণ আসলে বিশ্বজুড়ে অল্প বয়সীদের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি অন্ধকার দিক। এই পরিস্থিতি ধনী ও দরিদ্র সবদেশেই শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ ও ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, প্রায় ৭২ কোটি স্কুল বয়সী শিশু এমন সবদেশে বসবাস করে, যেখানে শারীরিক শাস্তি এখনও পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ৩৫ শতাংশ জানায়, বিগত ৩০ দিনের মধ্যে তারা এক বা একাধিক দিন গালমন্দ বা কটূক্তির শিকার হয়েছে এবং গত একবছরে অন্তত একবার শারীরিকভাবে হেনস্থা হয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ার চাবিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। অথচ, বিশ্বের লাখো শিশুর জন্য বিদ্যালয় এখনও নিরাপদ স্থান নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন শিশুরা শারীরিকভাবে হেনস্থা হচ্ছে, গ্যাং-এ যোগ দিতে তাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং কটূক্তি বা গালমন্দের শিকার হয়ে তারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। এছাড়া, তারা সামনা-সামনি এবং অনলাইনে যৌন হয়রানি ও সশস্ত্র সংঘাতের মতো বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি স্বল্পমেয়াদে তাদের শিক্ষা গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর দীর্ঘমেয়াদে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ তৈরি করে। এমনকী তাদেরকে আত্মহত্যার দিকেও ধাবিত করতে পারে। সহিংসতা আসলে চিরদিন মনে রাখার মতো একটি বিষয়, যা কোনও শিশুরই শেখার দরকার নেই।’
প্রতিবেদনটিতে শ্রেণিকক্ষে এবং এর আশপাশে শিক্ষার্থীরা কতভাবে সহিংসতার মুখোমুখি হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বে ১৩ থেকে ১৫ বছরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন সামান্য বেশি কটূক্তি বা গালমন্দ এবং একই হারে শারীরিকভাবে হেনস্থার শিকার হয়। শিল্পোন্নত ৩৯টি দেশে প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন জন স্বীকার করে যে, তারা সহপাঠীদের কাছে কটূক্তি বা গালমন্দের শিকার হয়েছে।
২০১৭ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ৩৯৬টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত বা নিশ্চিত করা হয়। দক্ষিণ সুদানে এই সংখ্যা ২৬, সিরিয়ান আরব রিপাবলিকে ৬৭ এবং ইয়েমেনে ২০। কটূক্তি বা গালমন্দের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে সমান ঝুঁকিতে থাকলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে মানসিকভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন ও হুমকির শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, বিদ্যালয়ে ছুরি ও বন্দুকের মতো অস্ত্রের ব্যবহারে প্রাণহানি অব্যাহত আছে। এতে আরও বলা হয়, ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে একটি বোতাম চেপেই কটূক্তি বা গালমন্দের মতো সহিংস, ক্ষতিকর ও হেয় প্রতিপন্ন করার আধেয় (কনটেন্ট) অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।