স্ত্রীকে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ চবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া জানাজানি হওয়ায় স্ত্রীকে মারধর ও গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নিশাত জাহান (৩০) নামের ওই নারী।
আদালত নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্তের জন্য হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মামলার আসামি চবি সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনাবিল ইহসান।
ভুক্তভোগী ওই নারী চবির সংগীত বিভাগে ‘সংগীতের নন্দনতত্ত্ব বিচার’ বিষয়ে এমফিল কোর্সে অধ্যয়ন করছেন। তিনি জামালপুর জেলার সদর থানার আরামবাগ বোস পাড়া এলাকার বাসিন্দা এস এম নজরুল ইসলামের মেয়ে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২২ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরীর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এরপর আদালতের আদেশ পেয়ে ৫ ডিসেম্বর ৩ আসামির বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় চবি শিক্ষক অনাবিল ইহসান ছাড়াও তার মা শরীফা আক্তার বানু (৫৩) এবং বাবা মো. আব্দুল খালেক বিশ্বাসকে (৬০) আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গেমসের ফাঁদে ফেলে কিশোরীদের সঙ্গে প্রতারণা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার
আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তথা দহনকারী গরম পানির মাধ্যমে ভুক্তভোগীর হাতের ক্ষতি, যৌতুকের দাবিতে মারাত্মক জখম ও সহায়তার অপরাধ—মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর পারিবারিকভাবে নিশাত জাহানের সঙ্গে অনাবিলের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরযাত্রী আপ্যায়নের পাশাপাশি নিশাতের পরিবারের পক্ষ থেকে অনাবিলকে ৩৭ প্রকারের ফার্নিচার ও তৈজসপত্র উপহার দেওয়া হয়। বিয়ের সময় দেনমোহর ২ লাখ টাকা ধার্য করে এই মূল্যের স্বর্ণালংকার নিশাতকে দেওয়া হয়।
বিয়ের পর নিশাতকে অনাবিলের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিশাতের স্বর্ণালংকার খুলে নেন তার শ্বশুর-শাশুড়ি। এরপর থেকে নানা সময় অনাবিলের জন্য মোটরসাইকেল এবং ভালো জিনিসপত্র উপহার না দেওয়ায় নিশাতকে অপমান করতেন শ্বশুর-শাশুড়ি।
একপর্যায়ে অনাবিল তার স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় চলে আসেন। সেখানে আসার পর থেকে অনাবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জমি কেনার জন্য নিশাতকে তার বাবা ও ভাইয়ের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। বাসায় চাপ সৃষ্টি করে নিশাতকে কথায় কথায় মারধর করতেন অনাবিল।
আরও পড়ুন: আটক মদ্যপ ২ নারীকে ‘বন্ধু পরিচয়ে’ ছাড়িয়ে নেন জাবি শিক্ষক
এরই মধ্যে আসামি অনাবিল সংগীত বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। দুজনের মধ্যে আদান-প্রদান করা নানা মেসেজ দেখেন নিশাত। বিষয়টি অনাবিলের বাবা-মাকে জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি। এসব বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চা বানানোর সময় নিশাতকে মারধর ও হাতে ফুটন্ত চায়ের পানি ঢেলে দেন অনাবিল।
এতে নিশাতের বাম হাতের কনুই থেকে নিচের অংশ ঝলসে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন—উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজহারে।
ভুক্তভোগী নিশাত জাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিয়ের পরে তিনি প্রায় সময়ই যৌতুকের জন্য আমাকে নির্যাতন করতেন। যদিও আমার পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কিছু জমি কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি। এর মধ্যে অনাবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায়। রাতে-বিরাতে তার সঙ্গে কথা বলেন। তবে আমি প্রমাণ না পাওয়াতে কিছু বলতে পারিনি।
‘‘তিনি তার ফোন সবসময় লক করে রাখতেন। তবে একদিন আমি সুযোগ পেয়ে তার কথোপকথনগুলো ছবি তুলে রাখি। পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি গরম চা দিয়ে আমার হাত ঝলসে দেন। আমি ৯৯৯-এ কল দিতে গেলে তিনি আমাকে আর এমন কিছু করবেন না বলে নিবৃত্ত করেন।
নিশাত বলে, পরে তিনি এমন ঘটনা আর কাউকে না জানানোর শর্তে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়গুলো তার পরিবারকে জানালেও কোন সমাধান করেনি। আর তিনি আমাকে ২৩ অক্টোবর তালাক দেওয়ার বিষয়ে আমি জানতাম না, যা পরবর্তীতে জেনেছি।
আরও পড়ুন: বান্ধবীকে নিয়ে রাতে হলে থাকায় জাবি ছাত্র বহিষ্কার
জানতে চাইলে চবি শিক্ষক অনাবিল ইহসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিনি (সাবেক স্ত্রী) যে অভিযোগগুলো করেছেন সবগুলোই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ। আমি তাকে গত ২৩ অক্টোবর তালাক দিয়েছি। আর তিনি আমার বিরুদ্ধে জিডি করেছেন ৫ নভেম্বর। জিডিতে তখন তার হাত ঝলসানোর অভিযোগ করেনি। এতে বোঝা যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হয়েছে। তিনি আমার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, সেটিও বানোয়াট।