ফেসবুকে প্রেম, বিয়ের চাপ দেওয়ায় বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা
ফেসবুকে পরিচয়ের মাধ্যমে হয় প্রেমের সম্পর্ক। বেশ কয়েকবার সাক্ষাতের পর সর্বশেষ নরসিংদী থেকে আশুলিয়ায় নিয়ে এসে পোশাক শ্রমিক রুবিনাকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে এনামুল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা।
গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকায় বংশাই নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের পর প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়ার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব-৪।
আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুই ব্যক্তি মূলহোতা এনামুল সানা (২৭) ও তার বন্ধু সোহাগ রানাকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ঐ নারী দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, নিহত রুবিনা খাতুন নরসিংদীর পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তার সঙ্গে ছয় মাস আগে এনামুলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় এবং একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং আগে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। এনামুল প্রায়ই ভিকটিমকে বেশি বেতনে অন্য চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ তারিখ এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। তখন এনামুল সুযোগ বুঝে রুবিনা খাতুনকে আশুলিয়ার বাসায় নিয়ে আসেন। এ সময় রুবিনা এনামুলকে বিয়ের কথা বললে এনামুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। ৮ তারিখ বেলা ৩টায় রুবিনা এনামুলকে আবার বিয়ের কথা বললে এনামুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রচণ্ড রেগে যান। এরপর দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কীভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবে সে বিষয়ে উপায়ান্তর না পেয়ে এনামুল তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান এবং বাসায় আসতে বলেন। এরপর দুজনে মিলে রুবিনার মরদেহ গুম করতে নদীতে ফেলে দেন।
প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে আরও জানা যায়, এর আগেও নারীকেন্দ্রিক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী এনামুলকে আশুলিয়ার আগের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ছাড়া তিনি একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে লিপ্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
তার বন্ধু সোহাগ দুই বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন বাসের হেলপার। এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তাঁর যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতেন তিনি। সোহাগ আগে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় এক মাস কারাভোগ করেছেন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে তাঁরা ঢাকায় আসেন। এ ঘটনায় বাদী হয়ে নারীর ভাই আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।