প্রাথমিকের পরীক্ষায় জালিয়াতি, তিন জেলায় আরও আটক ৩৮
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে লালমনিরহাট, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন কেন্দ্র ও এলাকা থেকে মোট ৩৮ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষাচলাকালী সময়ে এবং এর আগে তাদেরকে আটক করা হয়।
লালমনিরহাটে আটক ১৩
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে ১৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। আজ শুক্রবার লালমনিরহাটের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।
আটকেরা হলেন—হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বেজগ্রামের আশিক সিদ্দিকী (২৫), একই উপজেলার জাওরানী গ্রামের পরঞ্জন রায় (৩০), নাজমুন নাহার (৩০), পূর্ব সারডুবি গ্রামের রবিউল ইসলাম (৩১), পার শেখ সুন্দর গ্রামের সাহেরা খাতুন (৩১), উত্তর জাওরানী গ্রামের লাভলী খাতুন (৩১), পাটগ্রাম উপজেলার রহিমপাড়া এলাকার আফরিন আক্তার (২৭), কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতী গ্রামের রাফিয়া সুলতানা (২৭) রুদ্রেশ্বর গ্রামের খাদিজা খাতুন (৩০), আদিতমারী উপজেলার সরলখাঁ গ্রামের তৃপ্তী রানী (২৬), নামুড়ি গ্রামের সোহাগী বেগম (৩১), গোবর্দ্ধন গ্রামের মাহাবুবা রায়হানা (২৯) ও সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার তুলি রানী রায় (২৯)।
ওসি ওমর ফারুক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন কয়েকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নানান উপায়ে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ১৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিনাজপুরে আটক ১৮ জন
আটকরা হলেন- জেলার বিরল উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে মো. কামরুজ্জামান (৩২), একই উপজেলার রানীপুর গ্রামের আবুল কাদেরের স্ত্রী রাহেনা খাতুন (২৬), বীরগঞ্জ উপজেলার এলেঙ্গা গ্রামের প্রদীপ রায়ের স্ত্রী শেফালী রায় (৩৩), একই উপজেলার পশ্চিম কালাপুকুর গ্রামের তাশদিকুল আলমের ছেলে মো. মনিরুজ্জামান (৩০), কগিরপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জামিল বাদশা (৩১) ও বনগাঁও গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রাকিব (২৮), দিনাজপুর সদর উপজেলার মুরাদপর গ্রামের বেলাল হোসেনের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন (২৮), একই উপজেলার দাইনুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে শরিফুল আলম (২৮), ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল সালামের মেয়ে উম্মে সালমা (২৮) ও খানপুর গ্রামের সুলতান মাহমুদের মেয়ে নাসরিন জাহান (২৯), চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ আলোকদিঘী গ্রামের সবুজ চন্দ্র রায়ের কবিতা রানী রায় (২৭), একই উপজেলার দক্ষিণ আলোকদিঘী গ্রামের যতিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে সবজ চন্দ্র রায় (৩৪), হাকিমপুর উপজেলার মাধবপাড়ার গোলাম বিকরিয়ার স্ত্রী জাকিয়া ফেরদৌস (২৬), বিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ দায়োরপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে মহিদুল ইসলাম (৩২), নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিহারা গ্রামের আবু তালেব সরকারের কন্যা তানিয়া মোশতাবী (৩১), বোচাগঞ্জ উপজেলার শহিদপাড়ার আব্দুল গফুর মোল্লার ছেলে সায়েম মোল্লা তন্ময় (২৯), ফরিদপুর জেলার নগরবান্দা থানার দফা গ্রামের ফারুক মাতব্বরের মেয়ে উর্মিলা আক্তার (২০) ও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বকুয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে সুজন আলী (২৭)।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের ৮টি পরীক্ষাকেন্দ্রে কর্মকর্তারা ১৮ জনকে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে আটক করে। পরে তাদেরকে পুলিশে কাছে সোপর্দ করে। আটক ১৮ জনের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ রয়েছেন। এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ে আটক ৭ জন
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ও উত্তরপত্র জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সাতজনকে জালিয়াতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের কাছে বিভিন্ন ডিভাইস পাওয়া যায় এবং বাকি তিনজন বাসা থেকে উত্তরপত্র পূরণ করে নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- রাণীশংকৈল উপজেলার আলশিয়া গ্রামের মো. হুমায়নের ছেলে মো. সেহানুর ও বাজেবকশা গ্রামের টঙ্কনাথ বর্মনের ছেলে পঞ্চানন চন্দ্র, পীরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের শমেরুলের স্ত্রী মোছা. আর্জিনা ও টাটুয়াপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামের আনিসুর রহমান স্ত্রী হাসনাহেনা ও আলেকসিথি গ্রামের হাসান আলীর ছেলে আনোয়ার খালেক এবং রুহিয়া থানার মধুপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২৩-এর ১ম গ্রুপের (রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ) আওতাধীন জেলাগুলোতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭।