২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৯

কোচিংয়ের চাপে ২৮ ইঞ্জিনিয়ারিং-মেডিকেল ভর্তিচ্ছুর আত্মহত্যা

কোটা শহর  © সংগৃহীত

ভারতের রাজস্থানের কোটা জেলায় ভর্তি কোচিংয়ের চাপে আত্মহত্যা করেছে এক বাঙালি শিক্ষার্থী। সেখানে একের পর এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় এ বছর এটা নিয়ে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিকেল প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থী আসে মরু রাজ্যের শহরটিতে।

জানা যায়, ফরিদ হোসেন (২০) নামের ঐ ছাত্র এনইইটি এর প্রস্তুতি নিতে গত বছর কোটায় গিয়েছিল। শহরের ওয়াক্ফ নগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত সে। তার পাশে থাকা অন্যান্য ছাত্ররা পুলিশকে জানায়, গতকাল (২৭ নভেম্বর) আনুমানিক বিকাল ৪টার দিকে তাকে তারা শেষবার দেখেছিল। সন্ধ্যা ৭টার দিকেও যখন সে ঘর থেকে বের হচ্ছিল না, আর তাদের ফোনও ধরছিল না, তখন তারা বাড়িল মালিকের সাহায্যে বিষয়টি পুলিশকে ফোনে জানায়। পরে বাসা থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পৌঁছানোর পর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হবে। পরবর্তীতে তার দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে। তবে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া না গেলেও প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই ধরে নিয়েছে তারা।

এদিকে কোটায় একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে প্রচণ্ড চাপ থেকে অনেকে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। কোচিংগুলোতে ছাত্রদের ওপর অনেক চাপ দেওয়া হয়। আর দেশের আইআইটিগুলোতেও প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই ভারতের আইআইটিগুলোতেও এমন আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়।

ভারতের মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, প্রথমত এমন পড়ার চাপ দেওয়াই উচিত নয়, যার জেরে ছাত্ররা আত্মহত্যা করবেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ট্রেনিং যদি এতই ভয়াবহ হয় তাহলে ওই ট্রেনিং সেন্টার বা কোচিং সেন্টারগুলোতে মনোবিদ রাখা দরকার। মনোবিদেরা নিয়মিত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি খেয়াল রাখতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো আদৌ ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত এবং প্রয়োজনে সেন্টারগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। এক বছরে যখন ২৮ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেন, তখন বোঝা যায়, ওই জায়গা পড়াশোনার উপযুক্ত নয়।

বস্তুত, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ছাত্রদের ওপর এত চাপ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধরন বদলানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ।

পুলিশ সূত্রে খবর, এই বছর কোটায় মোট ২৮ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। ২০১৫ সালের পর এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ। 

কোটা হল ভারতের পরীক্ষা-প্রস্তুতি কেন্দ্র। যা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই কোচিং সেন্টারগুলোর বার্ষিক ব্যবসা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দশম শ্রেণি শেষ করার পর কোটায় আসে৷ কিছু ছাত্ররা তাদের পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।  

গত ১৯ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের ১৬ বছর বয়সী একজন ছাত্র বিষ খেয়ে মারা যায় এবং আবার ১৩ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডের আরেকজন মারা যায়। ২৭ আগস্ট বিহার এবং মহারাষ্ট্রের আরও দুইজন নিট ছাত্র তাঁদের সাপ্তাহিক পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই আত্মহত্যা করে।