১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:১৯

সোনার কলসের লোভ দেখিয়ে চক্রটি যেভাবে ফাঁসাল শিক্ষককে

  © সংগৃহীত

৭টি সোনার কলসের লোভ দেখানো হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে। পরে তাকে ৭টি সোনার কলসের ১টি কলস নষ্ট হয়ে গেছে ঝালাই করতে হবে, টাকা পাঠাতে হবে, নতুবা তুই ধ্বংস হয়ে যাবি। এসব কথা বলে তার কাছ থেকে মোট পৌনে ৫ লাখ টাকা নেয় একটি চক্র।   

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলার চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতারিত হয়ে ২০২১ সালের ২৬ জুন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় শিক্ষক আনোয়ার মামলা করেন। তদন্ত শেষে সিআইডির উপপরিদর্শক সিরাজ উদ্দিন ৩৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। এর মধ্যে ফরিদুল ইসলাম বাবুল, শাহ আলম, সাদ্দাম হোসেন খন্দকার, তৌহিদুল ইসলাম ও সাদেকুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন। অন্য ২৯ আসামি পলাতক।

ঘটনার সূত্রপাত আড়াই বছর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী সেলিনা পারভীনের মোবাইলে প্রতারক চক্র ফোন কলের মাধ্যমে। তবে ফোন রিসিভ করেন আনোয়ার। তখন আরস মহল্লার, এতিমদের ও কোরআনের কথা বলে প্রতারক চক্রের মিনারুল। বিরক্ত হয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আসামি সাদ্দাম হোসেন খন্দকার তাকে রোজা, রমজান ও তাহাজ্জুত নামাজের ফজিলতের কথা বলেন। আরস মহল্লার ওপর থেকে তার ওপর রহমত নাজিল হয়েছে এবং তিনি অনেক নেক্কার ব্যক্তি বলে তাকে প্রলুব্ধ করেন। এভাবে প্রলোভিত করে তার কাছ থেকে নগদ পৌনে ৫ লাখ টাকা ও সাহাবি সেজে ছয় ভরি স্বর্ণ হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

৭টি সোনার কলসের চাবি দিরে প্রতারক চক্র: চট্টগ্রাম বার আওলিয়ার মাজার শরিফের মসজিদের এতিমদের জন্য সাতটি
কোরআন শরিফ ও সাতটি জায়নামাজ দাবি করে প্রতারক চক্র। আরস মহল্লার রহমতের ভান্ডার মাটির তলের গোপন সম্পদ তার নামে উদ্ভাসিত হয়েছে এবং তাকে এগুলো নিতে হবে। না নিলে অভিশপ্ত হয়ে মরে যাবে বলে তাকে ভয়ভীতি দেখায় চক্রটি। পবিত্র মক্কানগরীতে একটি দুম্বা কোরবানি দিতে হবে বলে ৯১ হাজার টাকা দাবি করে প্রতারক চক্র। 

এরপর আসামি মিনারুল জানায়, গোলাপবাগের পেট্রোল পাম্পের পূর্বে রাস্তার পাশে ডেলনার নিচে একটি গোপন সম্পদ রাখা আছে। এখান থেকে বিসমিল্লাহ বলে উঠাতে বলে। মোমবাতি জ্বালিয়ে কাপড়টি খুলে পাতিলে রেখে তালাবদ্ধ করে রাখতে বলে। হুকুম ছাড়া খোলা যাবে না, ঘরে রাখা সব স্বর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ঘরে থাকা স্বর্ণের অলংকার সাহাবি দিয়ে মক্কা শরিফ থেকে ধৌত করতে হবে এবং পরে তা ফেরত দেওয়া হবে বলে তাকে ভয়ভীতি দেখায়।

আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে ফোন দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করত, নামাজের ফজিলতের কথা বলত। তারা এমনভাবে আমাদের বোকা বানিয়েছে, যা বলে বুঝাতে পারব না। দুই বছর হয়ে গেছে এখনো বিচার পাইনি। প্রতারকদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ চাই।”