হুমায়রা হিমুর রহস্যজনক মৃত্যু

কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা— কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে অনিয়মিত

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু  © ফাইল ছবি

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয় করছেন। তবে কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম বলেন, হিমুকে উত্তররার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হিমুর মোবাইল ফোনসহ নিখোঁজ রয়েছেন তার প্রেমিক মিহির।

জানা গেছে, বর্তমানে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন হত্যা। 

আরও পড়ুন: অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর লাশ উদ্ধার

আহসান হাবিব নাসিম আরও বলেন, আত্মহত্যা নাকি হত্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিকেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তার ছোট বোন মিহির ও প্রেমিক। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার মৃত্যু ঘোষণা করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশ কল করলে তার প্রেমিক হিমুর ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।

হুমায়রা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরে ছোটবেলা কেটেছে হুমায়রা হিমুর। ক্লাস টুতে পড়ার সময় থেকেই কাজ করতেন মঞ্চে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল দেশ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিমু নিজেই বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় হাইফাই কৌতুক শিল্পগোষ্ঠী ও ফ্রেন্ডস নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। 

১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় আসেন হিমু। প্রথমে ভর্তি হন নাগরিক নাট্যাঙ্গনে। এরপর কাজ করেন আরও কয়েকটি নাটকের দলে। 

এরপর এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ফটোশুট করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় মডেলিংয়ের জন্য জমা দেন। তখন এইডস নিয়ে সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। পরে দেখা যায় আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। একটি চায়ের বিজ্ঞাপনচিত্রে তাঁকে দেখার পর প্রথম হিমুকে নাটকে সুযোগ দেন নির্মাতা তাহের শিপন। নাটকের নাম ছিল ‘পি আই’। তাঁর প্রথম সহশিল্পী ছিলেন প্রয়াত দিলীপ চক্রবর্তী। 

২০০৫ সালে বিনোদন দুনিয়ায় কাজ শুরু করেন হুমায়রা হিমু। এই সময়ে তাঁর আসল নাম হুমায়রা নুসরাত হিমু থেকে হুমায়রা হিমু হয়। তাঁর এই নাম বদলের পেছনে রয়েছে অভিনেতা টনি ডায়েসের ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে দেশ টিভিকে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে হিমু বলেছিলেন, ‘টনি ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম একটা টেলিফিল্ম করি। উনি তখন আমাকে বলেন, “তুমি দুই অক্ষয়ের নাম দাও।” এর আগে আমি কেবল “হিমু” বলে পরিচয় দিতাম। তখন টনি ভাই বলেন, “পৃথিবীর যত বিখ্যাত মানুষ আছে সবার নাম দুই অক্ষয়ের।” এরপর থেকেই আমি হুমায়রা হিমু হয়ে যাই।’ 

হিমু যখন স্কুলের ছাত্রী, তখন তাঁর স্কুলের এক বড় বোন শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করেন। ঢাকা থেকে শুটিং করে স্কুলে ফেরার পর সবাই তাঁকে দেখতে আসেন। তখন তাঁকে দেখেই টিভিতে কাজ করার ইচ্ছা হয়। তবে ছোটবেলায় হিমুর ইচ্ছা ছিল এয়ার হোস্টেজ হওয়ার। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।

টিভি নাটকে অভিনয় শুরুর পর নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর অভিনয় দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। ‘সোনাঘাট’, ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’, ‘বাটিঘর’, ‘শোনে না সে শোনে না’, ‘কমেডি-৪২০’, ‘চাপাবাজ’, ‘অ্যাকশান গোয়েন্দা’, ‘ছায়াবিবি’, ‘এক কাপ চা’, ‘এ কেমন প্রতিদান’, ‘হুলো বিড়াল’, ‘ছন্নছাড়া ৪২০’, ‘অ্যাম্বুলেন্স ডাক্তার’, ‘পাগলা প্রেমিক’ ইত্যাদি নাটকে দেখা গেছে তাঁকে।

২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় হিমুর। সিনেমাটিতে তরু আপা চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে।


সর্বশেষ সংবাদ