পরিচয় লুকাতে কলেজছাত্রের শরীর থেকে আলাদা করা হয় মাংস
চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র সিবলি সাদিককে (১৯) হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করার পাশাপাশি হাড় থেকে মাংসও আলাদা করেছিল খুনিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন মরদেহ শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য তারা এ কাজ করে। আজ রবিবার চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন লোমহর্ষক তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক মাহবুব আলম।
এর আগে গতকাল শনিবার সিবলি হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুই আসামি উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরীকে চট্টগ্রাম নগরী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। উচিংথোয়াই রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি গ্রামের মংহ্লাজাই মারমার ছেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরী বান্দরবানের রুমার আশ্রম পাড়ার বাসিন্দা। র্যা বের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিবলিকে নৃশংসভাবে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা এসব তথ্য দেয়।
দুই আসামি র্যাাবকে জানায়, রাউজানে যে খামারে সিবলি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন, সেখানকার ছয়-সাত কর্মী মুরগির খাবার চুরি করে বাইরে বিক্রি করত। সিবলি এতে বাধা দিলে আসামিদের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ আগস্ট খামার থেকে বের হলে আসামিরা সিবলিকে জোর করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। পরে প্রধান আসামি উমংচিং মারমার মোবাইল নম্বর থেকে সিবলির বাবাকে কল করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। দরকষাকষির একপর্যায়ে আসামিরা ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সিবলিকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। তবে অপহরণের পরদিনই সিবলিকে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছুরি দিয়ে সিবলির শরীর থেকে গলা বিচ্ছিন্ন করে থোয়াইং মারমা। এ সময় উমংচিং মারমা, ক্যাসাইং চৌধুরী মারমাসহ চার থেকে পাঁচজন হাত-পা চেপে ধরে। এরপর শরীর থেকে মাংস আলাদা করে একটি গর্তে হাড়গোড় পুঁতে রাখা হয়। এরপরও ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে সিবলির বাবা ও নানার কাছ থেকে মুক্তিপণের ২ লাখ টাকা নেয় আসামিরা।
র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, লাশ যেন শনাক্ত করা না যায়, সেজন্যই শরীর থেকে মাংস আলাদা করে ফেলা হয় বলে জানিয়েছে আসামিরা। এক প্রশ্নের জবাবে র্যাযবের এ কর্মকর্তা জানান, সিবলিকে হত্যার পর আসামিরা মাংস খেয়ে ফেলেছে বলে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
নৃশংস এ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত আট আসামিকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি উমংচিং মারমাকে ১১ সেপ্টেম্বর সিবলির লাশ উদ্ধারের দিন পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে জনতা। এ ছাড়া তিন আসামি সুইচিংমং মারমা (২৪), রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার অংথুইমং মারমা ১২ সেপ্টেম্বর ও অং ফ্রাই সিং মারমা (৪৬) ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সিবলি রাউজানের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ির ২০০ মিটার দূরের ওই মুরগি খামারে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। খামারটির মালিক স্থানীয় কদলপুর ইউপির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ চারজন।