মাদ্রাসা ছাত্রকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন শিক্ষকের
কুমিল্লার হোমনায় হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা শিক্ষক মুহতামিমের বিরুদ্ধে। ১৬ বছর বয়সী ভুক্তভোগী কিশোর আবদুল কাইয়ুম উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এই ঘটনায় সহযোগী শিক্ষক আতিকুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক রয়েছে।
ঘটনাটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী খেলার সময় পরণের লুঙ্গি খুলে যাওয়ার কারণে শাস্তি হিসেবে ওইদিন রাতে তার দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলায় গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়। মাদ্রাসা শিক্ষক মুহতামিম অফিসে নিয়ে শিক্ষক আতিকুল এবং তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় ওই শিক্ষার্থীর ওপর এমন নির্যাতন চালান। গত দশ দিন শিশু আবদুল কাইয়ুমকে একটি বদ্ধরুমে আটকে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তারা। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাখার কারণে কেউ এতদিন মুখ খোলেনি। পোড়া ক্ষতের কারণে ঠিক মতো সে চলাফেরাও করতে পারছিল না। সোমবার বিকালে কাইয়ুমের মা হাফেজা বেগম ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে প্রথমে তাকে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। পরে অনেক চেষ্টার পরে তাকে দেখতে পান তিনি।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা, হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন ওই মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। পরে প্রথমে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
সোমবার রাতে শিক্ষার্থীর মা হাফেজা বেগম মূল অভিযুক্ত মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক বিশেষ সভায় মঙ্গলবার মুহতামিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম (২৮) উপজেলার নয়াকন্দি গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে এবং গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলাম (২৮) মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে।
নির্যাতিত শিক্ষার্থীর মা হাফেজা বেগম বলেন, সোমবার সকালে আমার ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে এবং বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝে তাকে বাড়ি নিয়া আসি। বাড়িতে গিয়ে আমাকে সে তাহার জখমের জায়গা দেখিয়ে পুরো ঘটনা বলে। ছেলে ইস্ত্রির ছ্যাঁকায় গুরুতর জখম হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তারা আমার ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছে। বিষয়টি আমার প্রবাসী স্বামী এবং এলাকার ব্যক্তিদের জানিয়ে হোমনা থানায় অভিযোগ করেছি।
ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। শিশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ইস্ত্রি এবং মাদ্রাসার সিসি টিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো থানায় জমা আছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকে জানানো হয়েছে। মাদ্রাসা কমিটিকেও বলেছি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে। মামলা হয়েছে। আমরা নজর রাখছি।
হোমনা থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, শিশু আবদুল কাইয়ুমকে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পোড়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত।