১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:০১

ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষকের আত্মহত্যা চেষ্টা, স্থানীয়রা বলছেন নাটক

আত্নহত্যা চেষ্টাকারী শিক্ষক রুবেল হোসেন  © সংগৃহীত

পটুয়াখালীর দুমকীতে ফেসবুক লাইভে এসে রুবেল হোসেন (৩৫) নামে এক স্কুল শিক্ষক আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২ টার দিকে দুমকী একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে তার আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনটি একটি নাটক বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে দুমকীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আত্মহত্যা চেষ্টাকারী স্কুল শিক্ষক রুবেল হোসেন দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী  শিক্ষক (ইংরেজি) এবং পাশ্ববর্তী উপজেলা বাউফলের রাজনগর গ্রামের মো. রব্বান হাওদারের ছেলে।

তার করা লাইভে দেখো যায়, আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এর এক মিনিটের মধ্যে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশালে শের-ই বাংলা মেডিকেলে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ বিষয়ে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবিদ হাসান জানান, রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য থেকে রেহাই পেতে নয়তো ছাত্রীর বড় বোনকে বিয়ে না করতে পেরে এ নাটক সাজিয়েছেন। অনেকেরই প্রশ্ন দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করাও একটা নাটক মনে হচ্ছে। পুরো লাইভের শব্দ শোনা গেলেও কোনখানেই দরজা ভাঙ্গার শব্দ নেই।

জানাগেছে, রুবেল হোসেন ইতোমধ্যে ২টি বিয়ে করেছেন এবং ওই দুই সংসারে তার দুইটি সন্তান রয়েছে। এরপরেও তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীকে বাসায় পড়ানোর সুবাদে তার বড় বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করে দেয় ওই ছাত্রীর পরিবার। এতে রুবেল হোসেন চরম হতাশ হয়ে পড়েন। অপরদিকে শিক্ষক রুবেল হোসেনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ সৃজনী বিদ্যানিকেতনে শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে (২০১৪ সালের দিকে) ওই প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়া মারজান নামের এক ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বিয়ে করেন তিনি। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেন। চাকরি হারিয়ে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় ওঠেন তিনি। সেখানেও নতুন করে আরেক মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন রুবেল হোসেন। 

এমতাবস্থায় রুবেল-সুমাইয়া মারজানের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। এর জেরে কিছুদিন পরেই সুমাইয়া মারজানকে তালাকের নোটিশ পাঠান রুবেল হোসেন। সুমাইয়া আইনের আশ্রয় নিলে এ বছর মার্চ মাসে রুবেল হোসেন সুমাইয়ার সাথে সংসার করবেন মর্মে আদালতে মুচলেকা দেন। রুবেল- সুমাইয়া দম্পতির তুবা(৩) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সুমাইয়া মারজানকে বিয়ে করার আগে  তিনি নিজ এলাকা বাউফলে প্রথম বিয়ে করেছিলেন। সেখানেও একটি পুত্র সন্তান রেখে ওই স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। 

সর্বশেষ দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এনটিআরসি'র মাধ্যমে নিয়োগ পান তিনি। এর পর ছাত্রীকে পড়ানোর সুবাদে তার বড় বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে নকচ করে ছাত্রীর পরিবার। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কাণ্ড করে বসেন তিনি।

ঘটনার দিন রুবেল তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন রকম আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে ভাইরাল হন এলাকায়। এমন কি নিজ কর্মস্থল দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়েও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন। এতে দুমকীর জনগন নড়েচড়ে বসেন এবং ক্ষিপ্ত হন। 

এবিষয়ে দুমকী একে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ( ভারপ্রাপ্ত)  মাহামুদা আক্তার হেপি জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। শিক্ষক রুবেল হোসেনের চারিত্রিক স্খলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন,  আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। 

ছাত্রী আফসানার মা জায়েদা বেগম জানান,  রুবেলে হোসেনের  আচরণ শিক্ষক সুলভ মনে না হওয়ায় তাকে বাসায় পড়াতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সে মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখান করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন ঘটনার কয়েকদিন আগে তাঁদের বাসায় এসে হুইল পাউডার খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষক রুবেল হোসেন।  
 
এ বিষয়ে রুবেল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রুবেল হোসেনের দেয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হয়েছেন এবং নিজেকে নিরীহ বলে দাবি করেন তিনি। 
 
দুমকী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি জেনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌছে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে  বরিশালে পাঠানো  হয়েছে।