‘ছাত্রলীগ না পেটালে আড়ালেই থাকতেন হারুন’
ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় মারধর করার ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগেও বিভিন্ন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার অভিযোগ আছে হারুন অর রাশীদের বিরুদ্ধে। খবরের শিরোনাম হয়েছেন কখনও শিক্ষকদের পিটিয়ে, আবার কখনও নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এমনকি নিজ সহকর্মীকেও চড় মেরে সমালোচিত হয়েছিলেন এডিসি হারুন।
থানায় তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বীভৎস নির্যাতনের ঘটনায় ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। খাইরুল ইসলাম বাশার নামে দৈনিক বাংলার একজন সংবাদকর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ছাত্রলীগ নেতাদের না পেটালে হয়তোবা এডিসি হারুন পর্দার আড়ালেই থেকে যেতেন...’’।
গণ অধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমান এ ঘটনায় বলেছেন, তিনি যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের দুই নেতাকে না পেটালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ বুঝতোই না এডিসি হারুন আসলে কী আচরণটা করেন! ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পিটিয়ে তিনি তার জাত চিনিয়েছেন।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে নিজ বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্নজনকে মারধর করায় আলোচিত-সমালোচিত এডিসি হারুনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে। এডিসি হারুনের স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
একটি বেসরকারী হাসপাতালে আহত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে দেখতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আঘাত করে কেউ রেহাই পাবে না। এসময় তিনি এই নির্যাতনকে ফৌজদারি অপরাধ উল্লেখ করে এর বিচার দাবি করেন।
এ ঘটনায় জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা বিভাগের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ওসি প্রদীপ ২০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করলেও তার কিছু হয় না; একজন মেজরকে হত্যা না করা পর্যন্ত। এডিসি হারুন পিটিয়ে রক্তাক্ত করে গলা টিপে প্রায় হত্যা করলেও কেউ তা দেখে না; যতক্ষণ না ছাত্রলীগের দুই নেতার দাঁত উপড়ে ফেলা হয়।
দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি লিখেন, এডিসি হারুন এখন সাময়িক বরখাস্ত। বাংলাদেশে কী এটাই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেতে যাচ্ছে যে, ক্ষমতাসীনদের কাউকে কিছু করা যাবে না, অন্যদের নিপীড়ন বা হত্যা করলেও সমস্যা নেই? এ কেমন দানবীয় সমাজ!
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরেও তীব্র ক্ষোভ ও অনন্তোষ বিরাজ করছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, হাইকমান্ড এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও বসে নেই। গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাত করে। সরাসরি এক জন ভুক্তভোগীও ছিলেন।
বৈঠক শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের সব শ্রেণির নেতাকর্মীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে যেন আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয় সেজন্য আমরা রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি।
দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় এডিসি হারুনকে একদিনে দুবার বদলি করা হয়। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রথমে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক আদেশে তাকে রমনা বিভাগ থেকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আরেক প্রজ্ঞাপনে এডিসি হারুনকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়।
পরে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা মোতাবেক আজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।